Image description

যশোর (ঝিকরগাছা-চৌগাছা)-২ আ.লীগের আসন হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিরর পাঁচজন প্রার্থীর আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন। এ আসনে বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে সামনে আসছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী আসনটি দখলে নিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী যারা মাঠে রয়েছেন তারা হলেন-যশোর জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও যশোর জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, সাবেক যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং যশোর জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহ্ক, চৌগাছা উপজেলার সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান সামাদ নিপুন রয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী পরিবর্তন করে লন্ডন প্রবাসী ডা. মোসলেহউদ্দীন ফরিদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আগে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা আরশাদুল আলমকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

গত ঈদের পর থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী আসনের বিভিন্ন হাট-বাজার ও পথে-ঘাটে নানাভাবে গণসংযোগ করছেন। দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে পারিবারিক, সামাজিত ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তারা ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে কেউ কেউ উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য দলের নারী কর্মীদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন।

বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান বলেন, দীর্ঘ পনের বছর ধরে আমি চৌগাছা এবং ঝিকরগাছা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মীদেরকে নানাভাবে বুকে আগলে রেখেছি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের দলের নিবেদিত নেতা কর্মীদের সুখে-দুঃখে, ভবিষ্যতেও পাশে থাকব। আশা করি আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিবে।

সাবিরা নাজমুল মুন্নি বলেন, ২০১১ সালে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে আমার স্বামী নাজমুল ইসলামকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমি আশাবাদী আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পাব।

প্রবীণ বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. ইসহ্ক বলেন, আমি দীর্ঘদিন যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম। দুবার ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ত্রিমুখী লড়াইয়ে আমি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলাম। বিএনপি আমাকে প্রার্থী বিবেচনায় রাখবেন বলে আশা করি।

চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের কর্মকাণ্ডে নিজেকে উৎসর্গ করে রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব। তিনি বলেন, চৌগাছা উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত কেউ প্রার্থী হতে না পারায় এবার আমাকে প্রার্থী করা হবে বলে আশাবাদী।

ইমরান হাসান সামাদ নিপুন বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই । সে জন্য এলাকায় গণসংযোগ করছি। তবে দলের সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব।

এদিকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের মধ্যে কোন্দল ও গ্রুপিং নিরসনের জন্য গত জুলাই মাসে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান নিজ উদ্যোগে বিএনপি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে এক টেবিলে বসবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকলে একই মঞ্চে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে সকলে রাজি না হওয়ায় উদ্যোগটি ভেস্তে যায় । ফলে এ আসনের বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা হতাশ । তাদের দাবি, কোন্দল নিরসন করে একক প্রার্থীকে নির্বাচনে মাঠে নামানো গেলে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. মোসলেহউদ্দীন ফরিদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতদের জন্য আমি লন্ডন থেকে ২৫ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দেওয়ার পূর্বেই আমি আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব পরিবর্তন করব। সবমিলিয়ে আমি ঝিকরগাছা-চৌগাছা সাধারণ মানুষের সেবক হিসেবে থাকতে চাই।

এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জাতীয় পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ অন্যান্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে এ আসনে গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে না ।

আ.লীগের এই আসনটি দখলে নিতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এবং নিজেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচার করছেন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তরুণ ভোটারদের আগ্রহের কমতি নেই। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভোটের অধিকার বঞ্চিতরা এবার নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার একটা উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন এ আসনের ভোটার ও সাধারণ মানুষ ।