Image description
 

জাতীয় পার্টির দশম সম্মেলন ঘিরে কয়েক মাস ধরে দলে চলছে একের পর এক ‘নাটক’। গঠনতান্ত্রিক উপায়ে সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও একাংশের সম্মেলনের উদ্যোগে জাপার চেয়ারম্যানপন্থি ও বহিষ্কৃত নেতাদের দুটি অংশ এখন মুখোমুখি। ফলে জাপার কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ছড়িয়েছে উত্তাপ।

সম্প্রতি আদালতের রায়ে চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডে স্থগিতাদেশ ও বহিষ্কৃত নেতাদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে দুপক্ষের চলমান উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। চলছে সম্মেলন ঘিরে কাদা ছোড়াছুড়ি ও দোষারোপের রাজনীতি। জাপায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে সন্দেহ চেয়ারম্যানপন্থিদের। এমন পরিস্থিতিতে দলটির একাংশের সম্মেলন আজ।

নেতারা জানান, গত ৩১ জুলাই আদালতের রায় ঘোষণার পর থেকে দুপক্ষই দাবি করছে রায় তাদের পক্ষেই রয়েছে। বহিষ্কৃত জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে। ফলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মেলন তিনি ডাকতেই পারেন। কিন্তু দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষের নেতাদের দাবি, আদালত আংশিক শুনানি করেছেন, স্থগিতাদেশ দিয়েছেন চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডের ওপর; কিন্তু চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করেননি। সুতরাং জি এম কাদেরই দলের চেয়ারম্যান। তিনি সুস্থ ও দেশে অবস্থান করায় কাউকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব না দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই, সম্মেলন ডাকা তো পরের কথা।

 

জি এম কাদেরের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলছেন, চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। চেয়ারম্যান এখন দেশে আছেন, সুস্থ আছেন। তিনি কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাপায় নেই। আদালতের রায়ে জাপা চেয়ারম্যানকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং অযোগ্যও ঘোষণা করা হয়নি। যারা প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কৃত হয়েছেন, তারা আজ পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছেন। তাদের পক্ষে জাপার কোনো সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোনো সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না। বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ জুন জাপার জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও হল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু দলের তৎকালীন কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এবং তৎকালীন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু আলাদা সম্মেলনের ঘোষণা দেন। এতে দলে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্য শুরু হয় বিভক্তি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়ামের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাদের বহিষ্কার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেন সংক্ষুব্ধরা। গত ৩১ জুলাই আদালত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদকের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং দলের বহিষ্কৃতদের পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত জানান।

 

দলে পুনর্বহালের তালিকায় রয়েছেন আনিসুল ইসলাম ও রুহুল আমীন হাওলাদার, মুজিবুল হক, দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ, নাজমা আকতার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জসীম উদ্দিন ও আরিফুর রহমান খান। এ পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে বহিষ্কৃতরা সেদিন রাতেই এক বৈঠক করেন, যেখানে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকেই দলের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার রাজধানীর গুলশান-১ এর ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে সম্মেলন হবে। সেই বৈঠকে চেয়ারম্যানের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আসার সুযোগে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এবং অন্যরা স্বপদে বহাল হন।

এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, কেউ কেউ বলছে দল ভেঙে যাচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই—আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই সম্মেলন আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি। সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর মধ্য দিয়ে দলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। সম্মেলনের পরে গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাপা চলবে সম্মিলিত নেতৃত্বে। চেয়ারম্যানপন্থি নেতাদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে দায়ের করা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বের বৈধতা নিয়ে একই ধরনের একটি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং একই বিষয়ে নতুন আরেকটি মামলা নিম্ন আদালত গ্রহণ করতে পারে না। তা ছাড়া শুনানি আংশিক হয়েছে, শেষ হয়নি। এতেই প্রমাণিত হয় সরকার আদালতের রায়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মাধ্যমে দল ভাঙার ইন্ধন দিচ্ছে।

জাতীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন কালবেলাকে বলেন, জাতীয় পার্টি যতবার ভেঙেছে সবসময়ই সরকারের ভূমিকা ছিল। এবারও কিছু নেতা, যারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট, তাদের সঙ্গে রওশনপন্থি কিছু নেতা যুক্ত হয়ে সরকারের মদদে জাতীয় পার্টিতে সেই সংকট সৃষ্টি করেছে। বছর কয়েক আগের একই ধরনের মামলা উচ্চ আদালতে চলমান। সেই একই বিষয়ে নিম্ন আদালতের আংশিক শুনানি শেষে দেওয়া রায় মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে।