Image description
সাবেক ছাত্র নেতাদের অভিমত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রাজনীতির অজ্ঞতার প্রকাশ বলে মনে করছেন ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতারা। তারা বলেন, সামনে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন তো আপাদমস্তক একটা রাজনৈতিক বিষয়। ফলে এ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া দেখাল তার পেছনে কারও ইন্ধন, উসকানি বা কোনো প্রেক্ষাপট তৈরিতে কেউ কাজ করছেন কিনা-সেই বিষয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মত দেন তারা।

জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না যুগান্তরকে বলেন, সামনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এর আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো মানেই হয় না। নির্বাচন তো আপাদমস্তক একটা রাজনৈতিক বিষয়। কেউ যদি মনে করেন-এটা ট্রেড বডির নির্বাচন। আমি বলব না, এটা ট্রেড বডির নির্বাচন না। এটা ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচন। যে ডাকসু স্বাধীনতার পতাকা তুলেছে। যে ডাকসু ছয় দফা সমর্থন করেছে। ফলে এগুলোর কোনো মানে নেই। আপাদমস্তক একটা রাজনৈতিক নির্বাচন। আর সেখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখতে পারবে নাকি? তিনি আরও বলেন, এখন তারা কি বুঝে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চাইছে তা পরিষ্কার নয়। এটা হয়ও না। এসব রাজনীতির অজ্ঞতার প্রকাশ বলেও মনে করেন মান্না।

জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর যুগান্তরকে বলেন, অতীতের ছাত্র রাজনীতির ভয়াবহতার কারণে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আতঙ্কিত। গত ১৬ বছরে যে ধরনের ছাত্র রাজনীতি আমরা দেখেছি। এটা একটা বাস্তবতা। শিক্ষার্থীদের জোর করে কর্মসূচিতে নেওয়া, নানাভাবে টর্চার করা হতো। কিন্তু শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি আমার কাছে কিছুটা রহস্যজনক মনে হয়েছে। কারণ দলীয় লেজুড়বৃত্তির অপরাজনীতি, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তির রাজনীতি পরিবর্তনের মাধ্যম হতে পারে। ডাকসু নির্বাচনের সবকিছু চূড়ান্ত। আগামী মাসে নির্বাচন হচ্ছে। এ সময় একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের এভাবে প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া, এর পেছনে কারও ইন্ধন, উসকানি বা কোনো প্রেক্ষাপট তৈরিতে কেউ কাজ করছে কিনা সেই বিষয়টা আমার মনে হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল একটা বড় সংগঠন। তাদের হলে কাজ করতে না দেওয়া হলে তারা নির্বাচন না করার ঘোষণা দিতে পারে। তাহলে তো নির্বাচনটা পার্টিসিপেটরি হবে না। ফলে নির্বাচন থামাতে কেউ এ কাজ করছে কিনা-সে প্রশ্নও রাখেন নুর। তিনি আরও বলেন, প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ না থাকলে শিবিরের মতো এ রকম যারা একটু গোপনে বা অপ্রকাশ্যে কাজ করে তাদের জন্য একটা ভালো সুযোগ তৈরি হবে। তবে আমি মনে করি, ভবিষ্যতের জন্য এটা মঙ্গলজনক হবে না। ক্যাম্পাসের জন্য বা আমরা যে একটা গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করতে চাই তার জন্যও।

শনিবার হল প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান আবারও আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বহাল রাখার কথা জানান। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হবে।

শুক্রবার সকালে ১৮টি হলের জন্য আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। কমিটি ঘোষণার পর রাতে হলগুলো থেকে মিছিল বের করা হয় এবং ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের’ দাবি জানানো হয়। রাত ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্য এলাকায় সমাবেশের পর বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এর ঘণ্টাখানেক পর উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটিই বহাল থাকবে এবং প্রতি হল প্রশাসন এ নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।