
নরসিংদীর বৃহত্তম উপজেলা রায়পুরার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ স্কুল মাঠে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের লোকজনকে দেওয়া হচ্ছে এ প্রশিক্ষণ। রাতের অন্ধকারে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, সায়দাবাদ স্কুলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন এবং নজরুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, সপ্তাহের প্রায় প্রতি রাতেই চলে এ প্রশিক্ষণ। বিশেষ করে রাত যখন গভীর হয় তখনই সরব হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা ও ককটেলের শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরীহ মানুষের বাড়িতে চাঁদাবাজি, জমি দখল ও বাড়িঘরে লুটপাটের কারণে সায়দাবাদ গ্রামটি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নতুন করে অস্ত্রের প্রশিক্ষণের কারণে তাদের মনে সন্দেহের দানা বাঁধছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ চরাঞ্চলে সংঘর্ষ টিকিয়ে রাখতে গোপনে বিভিন্ন স্থানে চলে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হানিফ মাস্টার ও এরশাদ নামে দুই ব্যক্তি কিছুদিন পরপর এ এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি হানিফ মাস্টারের ছায়াতলে থেকে রায়পুরার চরাঞ্চল শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সায়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম এলাকায় আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে ৫ আগস্টের পর নিজ নামে গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। গত বছরের ২২ আগস্ট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শাহ আলম বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন প্রতিপক্ষ এরশাদ গ্রুপের এক গৃহবধূ ও নবম শ্রেণির ছাত্রসহ ছয়জন।
সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা দখলসহ নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার খবর প্রচার হতে থাকলে সায়দাবাদ গ্রামে শাহ আলম বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। আর এতেই নিয়মিত অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতা ও শাহ আলম বাহিনীর প্রধান শাহ আলম, যুবলীগের কথিত ডা. জসিম উদ্দিন, ইকবাল, সালাউদ্দিন, যুবলীগের ইউনুস, শিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের রহিম, সেলিম, হারুন, আরমান, ছাত্রলীগের রনি, মাহফুজ, বাবুসহ ৪০-৫০ জন। এসব ব্যক্তি প্রশিক্ষণ নিয়ে নাশকতা চালাতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের দাবি, গত বছর নরসিংদী কারাগার ভেঙে আসামি পলাতক ও অস্ত্র লুটের সঙ্গে জড়িত কিছু আসামি এ এলাকায় থাকতে পারে। তাদের মাধ্যমে কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র এ এলাকায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানিসহ নিরীহ মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এজন্য যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কয়েকজনের হাতে অস্ত্রের ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, চর এলাকার সব জায়গায় অস্ত্র রয়েছে। সায়দাবাদ, শ্রীনগর, বাঁশগাড়ী, চানপুরসহ কোন জায়গায় অস্ত্র নাই, বলেন? আবার কিছু উদ্ধারও হচ্ছে।’
রায়পুরা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বায়েজিদ বিন মনসুর জানান, ওই এলাকায় বিবদমান দুটি গ্রুপ রয়েছে, যারা কিছুদিন পরপরই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা গোপনে অনেক কিছুই করতে পারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে। এলাকাটি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ নিয়ে অভিযান চালাতে হয়। পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে আমরা সেখানে অভিযান চালাই এবং কিছু অস্ত্র ও আসামি ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. কলিমুল্লাহ হক জানান, অস্ত্র প্রশিক্ষণের কোনো তথ্য এ পর্যন্ত জানা নেই। আর অস্ত্রের যে ছবি দেওয়া হয়েছে, তা ওই স্থানের কি না, সঠিক ধরা মুশকিল। তবে অস্ত্রধারীরা ওই এলাকার কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা ওই এলাকার লোক হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।