Image description

‘শিবিরের যে সকল ছেলেরা ছাত্রলীগে গুপ্ত আকারে প্রবেশ করতো তারাই বেশি আগ্রাসী ছিল। হলে হলে ছাত্র নির্যাতন, শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিবির থেকে আগত ছাত্রলীগরাই সম্মুখ সারিতে থাকতো’- সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। তার এ বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন আরেক সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা মাহিন সরকার। এছাড়া এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন আরমান হোসেন নামে আরেক সাবেক সমন্বয়ক। শিবিরের বিরুদ্ধে তিনজনের এই অবস্থানকে সাদরে গ্রহণ করে ধন্যবাদ জানিয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সংগঠনটি বলছে, সমন্বয়ক কাদের, মাহিন ও আরমান খুব গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়েছে, যা তারা বছরের পর বছর অভিযোগ করে আসছিল। তারা বলছে, এই সত্যগুলো প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।

গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনটির ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লীগ’ নামক অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই তিনি সমন্বয়কের শিবির নিয়ে করা মন্তব্যগুলোর স্ক্রিনশট ‍যুক্ত করে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়।

এতে লেখা হয়, ‘সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, মাহিন সরকার ও আরমান হোসেন আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়েছে, যা আমরা বছরের পর বছর অভিযোগ করে আসছি। সত্য কখনো গোপন থাকে না। সত্যগুলো এভাবেই প্রকাশিত হবে। সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, মাহিন সরকার ও আরমান হোসেনকে ধন্যবাদ এই সত্যগুলো প্রকাশ করার জন্য।’

পোস্টে আরও বলা হয়, ‘আমরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছি, গুপ্ত শিবিরের একাংশ ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে নানা রকম অপকর্মে জড়িয়ে জনমনে ছাত্রলীগের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি করেছে। যার অন্যতম উদাহরণ ছিলো বুয়েটের আবরার হত্যা। এছাড়াও গেস্টরুম নির্যাতনসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নানা রকম অপকর্মে যাদের নাম বার বার সামনে এসেছে হলগুলোতে এখনো তাদের শক্তিশালী উপস্থিতিই প্রমাণ করে, তারা গুপ্ত শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রলীগে মিশে ছিলো। শিবিরের সাবেক সাথী ও বর্তমান সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের আজকের স্বীকারোক্তি আমাদের এই অভিযোগকে আরো বেশি সত্য প্রমাণ করে।’

গত বছরের ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে এবং সমন্বয়ক আরমানের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্টে বলা হয়, ‘১৫ জুলাইয়ের ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে, বিজয় একাত্তর হলে হামলা, তা যে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ও একপাক্ষিক, তা ইতোমধ্যেই প্রথম আলোর প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সূত্রে সবাই জেনেছেন। পাশাপাশি আজ আরমান হোসেনের মন্তব্যে এটাও প্রমাণিত হলো, শিবির ও ছাত্রদল প্রথমে বিজয় একাত্তর হলে হামলা করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গুপ্ত শিবির ছাত্রলীগকে দেশবাসীর সামনে হামলাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য পাল্টা হামলা করে।’

এর আগে, গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের কমেন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের রূপ নিয়ে বা ছাত্রলীগের সাথে মিশে শিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থী নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেন আব্দুল কাদের। পরে সেটির সত্যতা যাচাই ও মূল্যায়নের জন্য আমজাদ হোসেন হৃদয় নামে ঢাবির এক ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফেসবুকে পোস্ট করলে মাহিন সরকার তার কমেন্ট বক্সে লেখেন, ‘ট্রু’। মানে আব্দুল কাদেরের দাবি সত্য। অন্যদিকে, আরমান হোসেন লেখেন, ‘শতভাগ সত্য বলেছে (আব্দুল কাদের)। ১৫ই জুলাইয়ের আক্রমণে ছাত্রলীগের ভেতরে থাকা শিবিরের লোকজনের অংশগ্রহণ এবং মামলার আসামী হওয়া এর প্রমাণ।’

উল্লেখ্য, মাহিন সরকার চব্বিশের ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদসহ ৩৯১ জনের নাম উল্লেখ করে গত বছরের ২১ অক্টোবর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেখানে ৮০০ থেকে ১ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। অন্যদিকে, একই ঘটনায় আরমান হোসেনও ২২০ জনের নাম উল্লেখ করে ২৭ অক্টোবর আরেকটি মামলা করেন।

আব্দুল কাদেরের বক্তব্য, যা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত:

‘আমরা ক্যাম্পাসে দেখেছি, শিবিরের যে সকল ছেলেরা ছাত্রলীগে গুপ্ত আকারে প্রবেশ করতো তারাই বেশি আগ্রাসী ছিল। ক্যাথলিক মোর দ্যান পোপ সাজার চেষ্টা করত। গেস্টরুমে তারাই বেশি আক্রমণাত্মক থাকতো। নিজেকে ছাত্রলীগার প্রমাণ করার জন্য এসব কাজ করতো। হলে হলে ছাত্র নির্যাতন, শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিবির থেকে আগত ছাত্রলীগরাই সম্মুখ সারিতে থাকতো। অসংখ্য নজির আছে এমন।’