
রাজধানীর গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি রাজশাহী। তারা সহোদর ভাই। বাবা একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী, বেতন সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন। বাবার সামান্য আয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন, তাই দুই ভাই টিউশনি করতেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে তারা আর টিউশনি করতেন না।
এ দুই ভাই হলেন—সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। সিয়াম বড়, সাদাব ছোট। দুজনেই প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। সিয়াম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেসিস্ট্যান্স ডে’ উদ্যাপন কমিটির সদস্য বলে জানা গেছে।
দুই ভাই-ই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বহিষ্কৃত সমন্বিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দুজনের ফেসবুক প্রোফাইলেই রিয়াদের সঙ্গে চলাফেরার ছবি রয়েছে।
সিয়াম ও সাদাবের বাবার নাম এসএম কবিরুজ্জামান। তাদের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন কবিরুজ্জামান। এরপর নাটোরের বাড়িভিটা বিক্রি করে দেনা শোধ করেন। প্রায় আট বছর আগে পরিবার নিয়ে রাজশাহী আসেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহীর কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনে চাকরি করেন।
সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনার পর ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরিবার আগে খড়খড়ি এলাকায় হজরত আলী নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকত। দুই ছেলে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর বাবা-মা ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। বাসাটির ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল ৪টায় রাজশাহীর কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সিয়াম ও সাদাবের বাবা কবিরুজ্জামান গাড়িতে গ্যাস ভরছেন। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন পান। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায়।
দুই ছেলের পড়াশোনায় মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান কবিরুজ্জামান। তবে নিজের অন্য কোনো সম্পদ, এমনকি বাড়িও নেই বলে জানান তিনি। তাহলে সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে কীভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়িতে গ্যাস দিই, এই সময় কেউ খুশি হয়ে কিছু দেয়। তা দিয়ে চালাতে হয়।’
কবিরুজ্জামান জানান, দুই ছেলে আগে টিউশনি করতেন। তবে কয়েক মাস আগে টিউশনি ছেড়ে দেন। তখন তিনি শোনেন যে, ছেলেরা রাজনীতি করছেন। এরপরও তাদের নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। গতকাল রবিবার সকালে তিনি শুনেছেন, ছেলেরা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে এ অভিযোগ তিনি বিশ্বাস করতে চান না। তার মতে, ছেলেরা ফেঁসে গেছেন।
ফিলিং স্টেশনের কয়েকজন কর্মচারী জানান, কবিরুজ্জামানের রাজশাহীতে নিজের কোনো বাড়ি নেই। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। ছেলে দুটির এমন ঘটনায় তারা বিস্মিত। তাদের বিশ্বাস, সিয়াম ও সাদাবকে চাঁদাবাজ বানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। অথচ রাঘব বোয়ালরা কেউ ধরা পড়েনি।