
জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন সময়ে দল গঠন করা নেতারা একই মঞ্চে উঠেছেন। গতকাল দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় দলটি থেকে বের হয়ে যাওয়া পাঁচটি অংশ যোগ দেয়। এতে উপস্থিত ছিলেন-
জাতীয় পার্টি (জেপি), রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (এমএ মতিন), জাতীয় পার্টি (জাফর) ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ সদ্য বহিষ্কৃত নেতাদের অনুসারীরা।
গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ’-এর উদ্যোগে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সব সরকারের উদ্দেশ্যই ভালো থাকে। কিন্তু ভালো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু এরশাদ সাহেব পেরেছিলেন। সম্রাট আকবরের পর এরশাদের মতো এত সুন্দর মন্ত্রিসভা কেউ গঠন করতে পারেন নাই। তার মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন সবাই এক একটি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবকে মুক্ত করে এনেছিলাম। ঢাকার এমন কোনো রাস্তা নাই যেখানে আমরা মিছিল করি নাই। শুধু জাতীয় পার্টি বিভক্ত হয়েছে তা নয়। সব দল বিভক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার কে? এরশাদ। এখন আমরা বলবো, কে বলেছে স্বৈরাচার, এরশাদ মোদের অহংকার। যারা দুর্নীতি করে তারাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। বুর্জোয়া রাজনীতিতে বিপ্লব হয় না। ঘৃণা ছড়ানোর যে পরিবর্তন তা বিপ্লব নয়। প্রতিটি সময় আগের সরকারের সমালোচনা হয়েছে। শুধু জাতীয় পার্টি সমালোচিত হয়েছে তা নয়।
সভাপতির বক্তব্যে পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, যতো তাড়াতাড়ি হয় নির্বাচন হতে হবে। যেন তেন নির্বাচন হলে তো লাভ নাই। আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। হ্যাঁ আমাদের সময়েও অনেক ভুল হয়েছে। কিন্তু এই জুলাইয়ে এতগুলো ছেলের জীবন বৃথা যেতে পারে না। আমরা যারা একই পরিবারের ছিলাম। আজ আমাদের পরিবারে ফিরে আসতে হবে। জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জিএম কাদেরকে বলেছিলাম চলেন ঐক্যবদ্ধ হই। নিজে গণতান্ত্রিক না হলে গণতন্ত্রের কথা বলা যায় না। যে দলে গণতন্ত্র নাই সেই দল থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্টিকে সংঘবদ্ধ করি।
পল্লীবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের শাসনামলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতিটা করি। আজ থেকে আমাদের ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো। দলকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করবো। আমরা জাতীয় পার্টিকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবো। মানুষ তৃতীয় শক্তি চায়। এই তৃতীয় শক্তি হবে জাতীয় পার্টি।
দু’টি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যুগ্ম চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোনো লজ্জা নাই। ৪৫ বছরের রাজনীতিতে আমাদের অনেক ভুল আছে। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনি একজন সুযোগ সন্ধানী লোক। আপনি শেখ হাসিনার দয়ার মন্ত্রী। দল করতে গেলে অনেক লোকের দরকার হয়। কিন্তু আপনি দল থেকে জাতীয় নেতাদের বের করে দিয়েছেন। শুধু বউ নিয়ে রাজনীতি করা যায় না। জিএম কাদের জুলাই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেননি। আমরা অনেক অনুরোধ করার পরেও তিনি জাতীয় সংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেননি। তিনি প্রেস কনফারেন্স করেননি ছাত্রদের পক্ষে। তিনি একদিনও বিপ্লব করেননি জীবনে, কোনো আন্দোলনে যাননি, কখনো জেলে যাননি। জনগণ তার মতো ভণ্ড নেতা পছন্দ করে না।
সাবেক সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো। যৌথ নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে, ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করবো।
বহিষ্কৃত মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিএম কাদের সেটা চান নাই। তিনি কোনো দিন রাজনীতি করেন নাই। তিনি ক্ষমতাবলে পার্টির নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করেন। কোনো নোটিশ না দিয়েই তিনি বহিষ্কার করেন। আমাদের অভিজ্ঞ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ৬০ জনকে বের করে দিলেন। তুমি বের করে দেয়ার কে? দরকার হলে তুমি চলে যাও। ৫ই আগস্ট থেকে পারিবারিক রাজনীতির কবর হয়ে গেছে।
স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- জেপি’র মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)’র প্রধান উপদেষ্টা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, জাপার সাবেক ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, খুলনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া।
উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টি (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. দিদারুল আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার, নাসরিন জাহান রতনা, সোলায়মান আলম শেঠ, মাসরুর মওলা, মো. আরিফুর রহমান খান, জিয়া উল হক মৃধা (রওশন), নূরুল ইসলাম মিলন (রওশন), এডভোকেট আবু হানিফ দিদার (মতিন), চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সরদার শাহজাহান, হারুন আর রশিদ, ভাইস-চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, আমানত হোসেন আমানত, নীগার সুলতানা রানী, জেপি যুগ্ম মহাসচিব আমিনুল ইসলাম তপনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।