Image description

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এক ওয়ার্ড বিএনপি নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, শুক্রবার স্থানীয় বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে দলের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পাটগ্রাম থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং শতাধিক অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা করে। মামলায় থানায় হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহারে নামীয় আসামিদের অধিকাংশই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন— রহমতপুর মেসিরপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ও ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম, সোহাগপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রশিদ (৪৯), বাউড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪২) ও একই গ্রামের মৃত মাহাতাব হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৫২)। তারা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ছিলেন।

থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি দুইজন হলেন—পাটগ্রামের মমিনপুর এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন এবং মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে সোহেল রানা চপল। তারা দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দলে কোনো পদ নেই বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পাটগ্রাম থানায় হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

বুধবার রাতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে পাটগ্রাম শহরের পাশে সরোওর বাজার এলাকায় পাথর ও বালুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির সময় তাদের আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রাতেই তাদের থানায় আনা হলে কিছু সময় পর বিএনপি ও তাদের সমর্থকদের একটি দল থানায় হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়।

এ সময় থানার ওসিসহ অন্তত আট পুলিশ সদস্যকে মারধর করে আহত করা হয়। গুরুতর আহত দুইজন পুলিশ সদস্য বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর শুক্রবার দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা ঘটনার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান।

তিনি বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে স্থানীয় পাথর কোয়ারি ইজারাদারদের সঙ্গে পুলিশের বিরোধ থেকে। বিএনপিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে। আমাদের কিছু নেতাকর্মী থানায় গিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে।”

তিনি আরও বলেন, “দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ ব্যক্তিগত অপকর্ম করলে তার দায় বিএনপি নেবে না। অতীতেও নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার চার আসামির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।