
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ন্যাম সম্মেলনের অতিথিদের থাকার জন্য মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়ায় তৈরি করা ভবনগুলো।
মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ভবনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন এক হাজার ২৫০ বর্গফুট, আর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ভবনের ফ্ল্যাটের আয়তন এক হাজার ৮৫০ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে তিনটি বেডরুম, একটি ড্রয়িংরুম, একটি ডাইনিংরুম, একটি কিচেন ও দুটি বাথরুম। ফ্ল্যাটের পেছনে রয়েছে ব্যালকনি। ভবনগুলোর চারপাশে গাছগাছালি লাগিয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
২০০৩ সাল থেকে ভবনগুলো এমপি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ছাত্র-জনতা সংসদ ভবন, গণভবনের পাশাপাশি ন্যাম ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর গত বছর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিলে ব্যক্তিগত মালপত্র সরিয়ে নিতে ১৫ আগস্ট সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখা থেকে সাবেক সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর সাবেক সংসদ সদস্যরা তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে মালপত্র সরিয়ে নিলে সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখা ফ্ল্যাটগুলোর দখল বুঝে নেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী ও দর্শনার্থীদের কোলাহালে মুখর ন্যাম ভবনে বর্তমানে সুনসান নীরবতা। ঝলমলে এলাকাটিতে জমে আছে শুকনা পাতা ও ময়লা আবর্জনা। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকাজও বন্ধ। ভবনগুলোর প্রবেশ মুখে নিরাপত্তাকর্মীরা অলস বসে থাকেন। যে কেউ ইচ্ছা করলে ভেতরে ঢুকে যেতে পারছে। কোনো কোনো ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে জামা-কাপড় মেলে দেওয়া দেখে বোঝা যায়, সেখানে কেউ থাকছেন। রাতেও এসব ভবনের কিছু ফ্ল্যাটে আলো জ্বলতে দেখা গেছে।
দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ভবনে বসবাস করছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও ব্যারিস্টার মঈনুল করিমসহ বেশ কজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়) অনুমতি নিয়েই সেখানে বসবাস করছেন। তাঁদের নামে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্র। বিধি মোতাবেক তাঁদের বেতন থেকে ভাড়াও কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদও ওই ভবনে বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে তিনি ওঠেননি। সাতটি ফ্ল্যাটে বসবাসের জন্য আবেদন করেছিল অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটরের অফিস। দুটি ছাড়া বাকিগুলোতে বসবাস করছেন তাঁর অধীনরা।
জানা গেছে, বর্তমানে এমপি হোস্টেলের ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনে বসবাস করছেন আনসার, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা। যাঁদের বেশির ভাগই ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। ৪ ও ৫ নম্বর ভবনে কেউ থাকেন না। আনসার ও পুলিশ সদস্যরা যে ফ্ল্যাটগুলোতে থাকেন সেই ফ্ল্যাটগুলোয় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোক বাস করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকছেন। যত দিন পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা না হবে, তত দিন তাঁদের সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগের সংসদ ভবন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ না থাকলে অতীতে এমপি হোস্টেলে অন্য কাউকে থাকতে দেওয়ার নজির নেই। কিন্তু এখন অনুমতি নিয়ে কেউ কেউ থাকলেও অনেকে অনুমতি ছাড়াই থাকছেন। তাঁরা ফ্ল্যাটগুলো যথেচ্ছা ব্যবহার করছেন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। আবার ৪ ও ৫ নম্বর ভবনে কেউ নেই। সেগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গত বছর ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ভবনের নিচের অংশে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে ফ্ল্যাটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ শুরুর আগেই ভবনগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ফ্ল্যাটগুলো এমপিদের ব্যবহার উপযোগী করতে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ এবং বেশ সময় দরকার।
সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখার সহকারী সচিব আলম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংসদ বিলুপ্ত করার পর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমপি হোস্টেল (ন্যাম ভবন) খালি করা হয়। তবে অনেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে সেখানে থাকছেন। আনসার, পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির অফিসের কয়েকজন সেখানে থাকছেন। যাঁরা থাকছেন, নিয়ম মেনে থাকছেন।’