Image description
» ২০২৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি দিয়ে শুরুর ইচ্ছা । » ‘ পরিমার্জিত ’ শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ শুরু এনসিটিবির । » ‘ উদ্যোগ প্রাথমিক পর্যায়ে , সিদ্ধান্ত হয়নি । ' » যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম তৈরির তাগিদ শিক্ষাবিদদের ।

দেশের শিক্ষাক্রম ‘ পরিমার্জন ’ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ( এনসিটিবি ) । ‘ পরিমার্জিত ' শিক্ষাক্রম তৈরি করার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই করা হচ্ছে । এ কাজে যুক্ত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ( আইইআর ) বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে । এনসিটিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে ।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্র বলেছে , ২০২৭ সালে পরিমার্জিত এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে । এ জন্য নানা কিছু যাচাইয়ের কাজ ( অ্যাসেসমেন্ট ) শুরু হয়েছে । প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে । পরে ধাপে ধাপে তা অন্য শ্রেণিতেও চালু করা হবে । অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ‘ নতুন স্বপ্ন ও পরিকল্পনার ’ ভিত্তিতে সংশোধিত শিক্ষাক্রম তৈরির নীতিগত আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন । এর মধ্যে প্রযুক্তি , অন্তর্ভুক্তি দায় , দরদ , ইনসাফ ' ইত্যাদি বিবেচনায় থাকবে ।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন , এ জন্য ‘ বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার জন্য ‘ বর্তমানের যে শিক্ষাক্রম তার থেকে মুক্তচিন্তা করতে হবে । সেটা যেন করা সম্ভব হয় , তার জন্য নিজেদের ও অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা এবং জাতীয় ঐকমত্যের বোধ হয় একটা প্রয়োজন রয়েছে । ’

সূত্র বলছে , পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । নতুন শিক্ষাক্রমে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে , তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি । অন্যতম কারণ দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই । জুন মাসে শিক্ষাক্রম বিষয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল , তা পিছিয়ে চলতি মাসে করা হবে । আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে ২০২৩ সাল থেকে প্রথম , ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয় । পরের বছর দ্বিতীয় , তৃতীয় , অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা চালু হয় । পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ , পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই সেই নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু ছাত্র - জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার ।

একই সঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় । তবে প্রাথমিকে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে । সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ( অতিরিক্ত দায়িত্ব ) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালুর । এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । পরিকল্পনা রয়েছে প্রথমে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের । পরে ধাপে ধাপে অন্য শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে । ' ২০২৭ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া পরিকল্পিত শিক্ষাক্রমকে ‘ পরিমার্জিত ' বলা হচ্ছে কেন — এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন , ‘ প্রতিটি শিক্ষাক্রম আরেকটি শিক্ষাক্রমের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয় । তাই চালু হতে যাওয়া শিক্ষাক্রমকে পরিমার্জিত বলাই শ্রেয় । ' শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন , ‘ ২০২৭ সালে যাতে ষষ্ঠ শ্রেণি নতুন ( পরিমার্জিত ) শিক্ষাক্রমের আওতায় আসে , সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে । একসঙ্গে যষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা সুচিন্তিত নয় । দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আওতায় যাবে । ”

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ( এনসিটিবি ) অন্য কর্মকর্তারা বলছেন , শিক্ষাক্রম তৈরির বিষয়টি মূলত নির্ভর করে রাজনৈতিক সরকারের ওপর । কেননা শিক্ষাক্রমের অনেক কিছুই নির্ভর করে সরকারের প্রত্যাশা ও নির্দেশনার ওপর । এ জন্য ধীরে চলো নীতি নিয়েছে এনসিটিবি । তাঁরা আরও বলছেন , নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা আলোচনা আর কর্মশালা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না । কারণ শিক্ষাক্রম প্রণয়নের বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্তই হয় রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ভিত্তিতে । পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান । 

গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন , ‘ নানা কারণে আগের সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি । এখন সেই ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী চলছে পাঠদান । সামাজিক প্রেক্ষাপট , অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন জরুরি । সবকিছু চিন্তা করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে । ” শিক্ষাবিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ এ - ও বলেন , “ শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন ঠিক নয় , যা শেষ শিক্ষাক্রমে করা হয়েছিল , সে পরিবর্তনটা টেকসই হয়নি । সুতরাং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে । '