
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২ নম্বর রেলগেট থেকে রেলওয়ে কারখানা পর্যন্ত ৩ টি লুপ লাইন । প্রতিটি লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য দুই কিলোমিটার । লুপ লাইনগুলোর বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের পাতের নিচের স্লিপার নেই । এমনকি কিছু স্থান থেকে রেললাইনের পাতও গায়েব । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , এ রেলপথে প্রায় দুই হাজার স্লিপার উধাও হয়ে গেছে , যার দাম প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি , লুপ লাইনগুলো অনেক পুরোনো । তাই কিছু স্লিপার ভেঙে গেছে । বাকিগুলো চুরি হয়েছে । তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন , রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় স্লিপারগুলো চুরি হয় । এ কারণে এসব পথে রেলওয়ে কারখানায় মেরামতে আসা রেলকোচ প্রায় সময়ে লাইনচ্যুত হচ্ছে । গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে , সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার এসব জায়গার খানিক পরপর স্লিপার উধাও । সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , সৈয়দপুরে ৫ টি লুপ লাইন রয়েছে । এগুলোর মধ্যে মালবাহী ট্রেন পরিবহনের জন্য দুটি রেলওয়ে স্টেশনের অধীন । অপর তিনটি লুপ লাইন দিয়ে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতের জন্য রেলওয়ে কোচ আনা- নেওয়া করা হয় । এই লুপ লাইন তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ।
নিয়ম অনুযায়ী , প্রতি কিলোমিটার রেলপথে রেললাইনের পাতের নিচে ১ হাজার ৪০০ কাঠ , লোহা বা সিমেন্টের স্লিপার থাকে । প্রতিটি স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত চারটি করে ক্লিপ দিয়ে লাগানো হয় । সেই হিসাবে এসব রেলপথে ৪ হাজার ৮০০ স্লিপার থাকার কথা । এর মধ্যে ২ হাজার স্লিপারই নেই । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে কারখানার প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন , প্রতিটি স্লিপারের দাম ৮ হাজার টাকা হিসাবে চুরি যাওয়া স্লিপারগুলোর দাম প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা । স্লিপার না থাকায় ওই পথের রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে । এতে মেরামতে আসা কোচগুলো প্রায় সময় লাইনচ্যুত হয় ।
২ কিলোমিটার লুপ লাইনে রেলওয়ে কারখানাসংলগ্ন ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার ফারুক আহম্মেদ বলেন , ‘ দিনদুপুরেই এই রেললাইন থেকে স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হয় । এ ক্ষেত্রে রেলওয়ের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করেন । ’ রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানার শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন , ‘ এভাবে রেললাইন থেকে স্লিপার উধাও হওয়াটা সত্যিই উদ্বেগের । ' এর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়ী করেন তিনি । এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ( ইনচার্জ ) মোরসালিন রহমান বলেন , ‘ এই লুপ লাইনগুলোর স্লিপার অনেক পুরোনো । কাঠের ।
অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ও কোচ চলাচলের কারণে অনেক স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়েছে । কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা । ইতিমধ্যে রেলওয়ে স্টেশন অংশে লুপ লাইনের সংস্কার করে নতুন স্লিপার লাগানো হয়েছে । ' স্লিপার চুরির বিষয়ে স্থানীয় রেলওয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন , “ আমি এ কর্মস্থলে নতুন । তাই অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই । বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হবে । ' সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি মাহমুদ - উন নবী এ বিষয়ে বলেন , স্লিপার চুরির বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি । পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন ।