
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য দুই বছরের প্রচেষ্টায় একটি নান্দনিক ডিজাইনের হাউসবোট নির্মাণ করেছেন দীপংকর চৌধুরী। নাম দিয়েছেন ‘রাজহংস’। তার সেই হাউসবোটটি দখল করে নিয়েছেন মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল হক বেনু।
হাউসবোটটির প্রকৃত মালিক দাবি করা দীপংকর চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আমার নৌকাটির মালিকানার সঙ্গে একাধিক অংশীদার জড়িত। তবে বিএনপি নেতা মমিনুল হক বেনু অবৈধভাবে সেটি দখল করে নিয়েছেন। আমাকে কিংবা আমার অংশীদারদের কাউকেই সেই হাউসবোটের ধারেকাছেও ভিড়তে দিচ্ছেন না। উল্টো হাউসবোটটি নাকি আমি তার কাছে বিক্রি করে দিছি—এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তা ছাড়া প্রথম দিকে মমিনুল হক বেনুর অনুরোধে ফুল মিয়া (হাউসবোটটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রমিক) আমার কাছ থেকে দুই কিস্তিতে বিকাশের মাধ্যমে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছেন।’
দীপংকর চৌধুরী আরও বলেন, ‘হাউসবোট নির্মাণে আমরা বড় অঙ্কের অর্থ ইনভেস্ট করেছিলাম। এখন সেটি দখল হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি আমার অনুরোধ, তারা যেন সব দিক যাচাই করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন।’
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা মমিনুল হক বেনু কালবেলাকে বলেন, ‘দুই বছর আগে দীপংকর বোটটি নির্মাণের সময় স্থানীয় অনেক মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেন। পাওনাদারদের অনুরোধে আমি বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করি। দীপংকর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দুই মাসের মধ্যে দেনা পরিশোধ করবেন, তা না করায় আমি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে বোটটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিই।’
প্রথমে তিনি থানার ওসির মাধ্যমে বোট বুঝে নেওয়ার কথা বললেও যখন এ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত কাগজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তখন মমিনুল হক বেনু বলেন, ‘দীপংকর নিজেই আমাকে নৌকাটি বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে, হাউসবোটের অংশীদারদের মধ্যে একজনের সঙ্গে মমিনুল হক বেনুর মোবাইল ফোনে আলাপের একটি কল রেকর্ড কালবেলার হাতে রয়েছে। সেই রেকর্ড থেকে শোনা যায়, মমিনুল হক বেনু বলছেন, ‘বোট ফেরত নেওয়ার সময় শেষ। দুই বছরের দেনা পরিশোধ করলেও কাজ হবে না। যদি কেউ বোটটি ফেরত নিতে
আসে, তাহলে তার হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। আমরা বিএনপির মানুষরা মানুষের বাড়িঘর লুইট্টা-পাইট্টা নিতাছিগা! আর এইটা বোট, এইটার তো কোনো কাগজপত্রই নাই।’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘এটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক বিরোধ। এখানে দলীয়ভাবে কিছু করার নেই। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করতে পারি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘কোনো ধরনের অন্যায়, অপকর্মের সঙ্গে বিএনপি নেই। টাঙ্গুয়ার হাওরে অবৈধভাবে নৌকা দখলের অভিযোগ পেলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিবুর রহমান বলেন, ‘বোট সংক্রান্ত কোনো ঝুট-ঝামেলার বিষয়ে আমি অবগত নই। চলতি মাসের ৪ জুন আমি এ থানায় জয়েন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘যদি কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ জানায়, তাহলে আমি প্রয়োজনীয় আইনানুগ নেব।’