
আজ সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সহপাঠীদের সঙ্গে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজেরও। কিন্তু পরীক্ষার আগেই নির্মমভাবে প্রাণ হারান তিনি। গত বছরের ১৮ জুলাই ঢাকার ধানমন্ডিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
ফাইয়াজের বয়স তখন প্রায় ১৮। কোটা সংস্কার আন্দলোনে শিক্ষার্থীদের ডাকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। সেই সময় ধানমন্ডিতে সড়কে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলাকালে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ফারহান ফাইয়াজ। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তার আগের দিন বুধবার (২৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন বার্তায় ভাই হারানোর যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছেন ফারহানের বড় বোন সাইমা ফারহান।
ভাইকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, “আগামীকাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। যেখানে অনেকেই অংশ নেবেন, কিন্তু আমার ভাই আর পারবেন না। ভাইয়া না থাকায় এই পরীক্ষাটাও যেন এক শূন্যতা বয়ে আনছে।”
তিনি আরও জানান, ফারহান এইচএসসি শেষ করে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তার চাকরির প্রয়োজন ছিল না, আন্দোলনে নামারও কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। “তিনি রাজপথে নেমেছিলেন নিজের জন্য নয়, অন্য ভাইবোনদের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে। কিন্তু সেখান থেকেই আর ফিরে আসেননি,” বলেন সাইমা।
ভাইয়ের যত্নবান ও সংবেদনশীল স্বভাবের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি লিখেছেন, “ভাইয়া ত্বকের যত্নে ছিলেন খুব সচেতন। সামান্য রোদেও ছাতা ছাড়া বের হতেন না। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, শরীরের প্রতি খুব যত্নশীল ছিলেন। অথচ সেই ভাই-ই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তার সাহসী কণ্ঠকে গুলি করে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
সাইমা ফারহান আরও লিখেছেন, “আজ যখন দেখি, জুলাই বিপ্লবে এত রক্ত ঝরার পরও দেশে বৈষম্য, দুর্নীতি আর অনিয়ম থামেনি, তখন হৃদয় ভেঙে যায়। ভাইয়ার স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রের, যেখানে মানুষ সমান মর্যাদা পাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজও অধরাই থেকে গেছে।”
ফারহান ফাইয়াজ এখন নেই, তবে তার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, বরং পুরো প্রজন্মের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে তাঁর শূন্যতা যেন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে পরীক্ষার হলে।