
রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নির্জনকে সভাপতি এবং একই বর্ষের মো. আসাদুর রহমান বিজয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১১ জুন) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক এম. রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি অনুমোদন দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় শুরু থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এমনকি ভর্তি ফরমে শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকারনামার মাধ্যমেও দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি দীর্ঘদিন ধরে ‘রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—সিনিয়র সহসভাপতি মো. মামুন হোসেন খান, সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল রাফি ও মো. রাকিবুল হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রাইভার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চারজন—মো. আকরাম হোসেন, মাশরুর মাহমুদ, মেহেদী হাসান ও রওনক জাহান রওনক। সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ আহমদ এবং দপ্তর সম্পাদক উল্লাস কুমার দত্ত আকাশ।
এ বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. নির্জন বলেন, ‘কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ ও সদস্যদের সম্মতির ভিত্তিতে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি না। কিন্তু আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার আছে। বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, কেবল আমাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে সেটি বৈষম্যপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনার সুযোগ হয়নি। প্রশাসনের একচেটিয়া নীতিমালা ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ—এ কথা প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালাতেই স্পষ্টভাবে বলা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে এর নাম ব্যবহার করে দলীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন করে একটি নোটিশও জারি করা হয়েছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নীতি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটিই প্রথমবারের মতো ছাত্রদলের কোনো প্রকাশ্য কমিটি গঠন করা হলো। এর আগে ছাত্রলীগ, শিবির কিংবা বাম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও প্রকাশ্য কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। যদিও বিভিন্ন সময়ে কিছু সংগঠন ‘ভিন্ন নামে’ সীমিত আকারে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলনিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ চালু হলেও সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যেমন ক্যারিয়ার ক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, ফটোগ্রাফিক ও ডিবেটিং সোসাইটি সক্রিয় রয়েছে।