
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলে দু’দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের ৪ নেতা এবং এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে ও সাড়ে ৮টার দিকে প্যারিস রোডে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের মশাল মিছিলে প্রায় সবাই আহত হয়েছে। তবে চারজন নেতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চব্বিশ পরবর্তী সময়ে এ হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ হামলা চালিয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্য।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাহবাগবিরোধী ঐক্য। ঐক্যের নেতারা তাদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর হামলার প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
আহতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রগণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফ, ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ সৈকত এবং একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ। তবে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের আহত কর্মীদের পরিচয় জানা যায়নি।
জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাসের প্রতিবাদে মশাল মিছিলের ডাক দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ মিছিল হওয়ার কথা ছিল। তবে তা ওই সময় হয়নি। খবর পেয়ে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যর ব্যানারে’ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পরিবহন মার্কেটের আমতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। অন্যদিকে রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল নিয়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সমাবেশে উপস্থিত শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা বাম সংগঠনের জোটের দিকে তেড়ে আসেন। এ সময় উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তবে বাম সংগঠনের অভিযোগ, শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা তাদের দিকে চেয়ার, ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল নিয়ে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে তাদের পিছু নেয় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা। বাম জোটের মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে পৌঁছালে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা ফের মিছিলে বাঁধা দেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় বাম নেতা নাসিম সরকারকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়কে পড়ে যান। এতে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বাম নেতারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময়ও শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা বাম জোটকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
অভিযোগের বিষয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আদালতের একটি রায় হয়েছে। কিন্তু যারা এ রায় মেনে নেননি, তাদের আমরা সবাই চিনি। তারা ২০১৩ সালেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শাহবাগতন্ত্র কায়েম করে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপন করেছিল। চব্বিশে এসে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমাদের তা সমাধান করতে হয়েছে। শাহাবাগীরা সব সময় হাসিনা আর ভারতের ম্যান্ডেট সার্ভ করেছে। আজ আমরা বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে পরিবহন চত্বরে একত্রিত হয়েছি। আমরা শাহবাগবিরোধী স্লোগান দিয়েছিলাম তখন তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর ঢিল-নিক্ষেপ করে উত্তেজিত করেছিল।’
এ ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘এটা আদত ছাত্রশিবিরের কোনো প্রোগ্রাম নয়। এটা শাহবাগবিরোধী ঐক্যর প্রোগ্রাম ছিল। এটি যেহেতু ঐক্য, সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য ২০১৩ সালে তাদের যে ভূমিকা, এটির বিরুদ্ধেই আজকের কর্মসূচি ছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিভৃত করার চেষ্টা করে। সেখানে ছাত্র উপদেষ্টাও কাজ করেছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেব।’