Image description

নব্বইয়ের দশকে রাজধানী ঢাকার অপরাধজগতে বহুল আলোচিত একটি নাম ছিল সুব্রত বাইন, যিনি ‘ফতেহ আলী’ নামেও পরিচিত। তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্প্রতি আবারও গ্রেপ্তার হয়েছেন তার সহযোগী মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ও শরিফসহ। অতীতেও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় জড়িয়েছেন অপরাধে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকায় ঘটে যাওয়া তিনটি খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের নাম উঠে এসেছে। খুনের পাশাপাশি জমি ও ফ্ল্যাট দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে তার সম্পৃক্ততার তথ্যও মিলেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ২১ এপ্রিল রাজধানীর হাতিরঝিলে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ সরদার (৩৫) সুব্রত বাইনের অনুসারীদের গুলিতে নিহত হন। একই সূত্রে আরও জানা যায়, সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে বেশকিছু অস্ত্র বাংলাদেশে এনেছেন সুব্রত বাইন, যেগুলো তাঁ বাহিনী নানা অপরাধে ব্যবহার করছে।

সুব্রত বাইনের অপরাধজগতে জড়ানোর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নব্বইয়ের দশকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তিনি আধিপত্য বিস্তার করে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে অসংখ্য খুন-জখমের ঘটনাও ঘটে। একাধিকবার তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান, তবে জামিনে ছাড়া পেয়েই অপরাধে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

ত্রিমাতি সুব্রত বাইন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৭ সালে, ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামে। মা ও তিন বোনকে নিয়ে মগবাজারের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। পরিবারে ছিলেন বড় সন্তান।

শিক্ষাজীবন শুরু বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে। পরে ঢাকায় এসে ভর্তি হন শেরেবাংলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে এবং সেখান থেকেই এসএসসি পাস করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই তার অপরাধজগতে পা রাখা। সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার, সেখান থেকেই অস্ত্র হাতে নেওয়া এবং পরে মগবাজার এলাকায় গড়ে তোলা নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

১৯৯৩ সালে রাজধানীর মধুবাজার এলাকায় এক সবজি বিক্রেতা হত্যার ঘটনায় পুলিশের নজরে আসেন সুব্রত বাইন। এরপর মগবাজারের বিশাল সেন্টার নির্মাণকাজে চাঁদাবাজির ঘটনায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ—এসব এলাকা হয়ে ওঠে তার নিয়ন্ত্রণাধীন। ১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা মুরাদ খুনের মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

রাজনীতির সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন সুব্রত বাইন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির হয়ে মগবাজার এলাকায় কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’র পরিচিতি দেয়। পরে যুবলীগের লিয়াকতের সঙ্গে মগবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষেও জড়ান।

২০০১ সালে তার নামে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি হয়, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। এরপর কলকাতায় পালিয়ে যান এবং সেখানেও অপরাধচক্রে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপালে, সেখানেও ধরা পড়েন। সবশেষ ২০১২ সালে কলকাতায় আবারও গ্রেপ্তার হন সুব্রত বাইন।