Image description

মাহমুদুর রহমান

 

দিল্লির কূটচালকে পরাভূত করে আর একটি প্রতিবিপ্লবী পদক্ষেপ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ কয়েক দিনে প্রতিহত করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা পলায়নের পর থেকেই দিল্লি অব্যাহতভাবে এই অপচেষ্টা করে চলেছে।

গত বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই মিলে দেশ পুনর্নির্মাণের জন্য সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে যে উদ্দীপনা এবং ত্যাগের মানসিকতা আশা করা গিয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ভারতীয় দালালগোষ্ঠী-বহির্ভূত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভেতরকার বৃহত্তর ঐক্যও সবার ভুলে বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

আশ্চর্যজনকভাবে, গত ৯ মাসে ড. ইউনূস সরকারকে ছোট-বড় মিলে হাজারখানেক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমি যখন এই মন্তব্য প্রতিবেদন লিখছি, তখনো রাজধানীতে গোটা ছয়েক আন্দোলন চলছে। যে কোনো সরকারের পক্ষেই এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন। এটি আমাদের সার্বিক দেশপ্রেমেরও লক্ষণ নয়। অনেকে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণেই এই বিস্ফোরণ। আমার কাছে মনে হয়, এটি জাতি হিসেবে আমাদের স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ। জাতির বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে দেশের জনগণকে যে ধৈর্যশীল এবং ঐক্যবদ্ধ রাখা গেল না, এই ব্যর্থতার দায় প্রধানত সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর। প্রথমে সরকারপক্ষ দিয়েই ভুলগুলো বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি।

৫ আগস্টের পর সংবিধান স্থগিত করে বিপ্লবী সরকার কিংবা জাতীয় সরকার গঠন না করাটাই বিসমিল্লাহতেই গলদ হয়েছে। এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে আজ পর্যন্ত বঙ্গভবনে একটি টাইম বোমা রেখে দেওয়া হয়েছে। হাসিনার রেখে যাওয়া পচা সংবিধানের প্রতি কোনো কোনো মহলের প্রেমের কারণেই এ ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময় অনভিজ্ঞ এবং তরুণ উপদেষ্টাদের কার্যকলাপ সরকারে শুধু সংকট বৃদ্ধিই করেনি, অতিদ্রুত জুলাই ঐক্যে ফাটলও ধরিয়েছে। একজন তরুণ উপদেষ্টা তার বুদ্ধিবৃত্তিক পারঙ্গমতা এবং সেক্যুলার সুশীলত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি পদের সঙ্গে একেবারেই বেমানান সব পোস্ট দিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করে পরে আবার সেগুলো মুছে দিয়েছেন। ভারতীয় এজেন্টদের সাম্প্রতিক প্রতিবিপ্লবী অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াসকালে সেই তরুণ উপদেষ্টা তার কৃতকর্মের জন্য বিলম্বে হলেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে সর্বনাশ যা হওয়ার, সেটা হয়েই গেছে।

অন্য একজন বিদেশ থেকে আগত উপদেষ্টা ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন কী করবেন না, সে সম্পর্কে তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে পোস্ট দিয়েছেন এবং সমালোচনার মুখে সেটি প্রত্যাহার করেছেন। পোস্ট প্রত্যাহার করতে গিয়ে তিনি এক ব্যাখ্যায় বলেছেন, পোস্টের বক্তব্যটি তার একান্তই ব্যক্তিগত ছিল। উপদেষ্টার সরকারি চেয়ারে বসে যে এসব বিতর্কিত এবং ব্যক্তিগত পোস্ট দেওয়া যায় না, এই সাধারণ জ্ঞান কি এই কথিত মেধাবীদের নেই? এ ছাড়া মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই কয়েকজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, দুদক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের বিদেশযাত্রার ওপর বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।

রহস্যজনক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একরকম ঘোষণা দেওয়ার পর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তার একেবারে উল্টো কথা বললেন। উপদেষ্টাদের এ-জাতীয় দায়িত্বজ্ঞানহীন, বালখিল্য আচরণ এবং তাদের ব্যক্তিগত সহকারীদের দুর্নীতির ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ভয়ানকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং ড. ইউনূস নিজে দুর্বল হয়েছেন। উপদেষ্টাদের বালখিল্যতার আরো উদাহরণ দিয়ে আমার লেখাটিকে দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না। সেই সঙ্গে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণায় অহেতুক বিলম্ব পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতার কারণেই এই লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

দেশে ভারতের পরিকল্পনাক্রমে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকেও দায় নিতে হবে। এটা সবারই বধ্যমূল ধারণা যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। দলটির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামীর আসনসংখ্যা ৪০ অতিক্রম করা কষ্টসাধ্য হবে বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। যদিও ইসলামী দলটি মনে করে নির্বাচনের মাঠে তাদের অবস্থা নাকি আমার ধারণার চেয়ে অনেক উত্তম। আমার ধারণা এবং জামায়াতে ইসলামীর উচ্চাশার মধ্যে কোনটি সঠিক, সেটি নির্ধারণে আমাদের নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যাই হোক, বিএনপির জন্য এমন একটি সুবিধাজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কেন তারা এতখানি ধৈর্যহীন আচরণ করছে, সেটি আরেক বিরাট রহস্য।

সম্প্রতি ঢাকার আধা অংশের মেয়রের পদ পাওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একজন নেতার মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলটি ঢাকা প্রায় অচল করে যে আন্দোলন করেছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে দেশের অধিকাংশ নাগরিক প্রশ্ন তুলেছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের অধীনে ২০২০ সালে মেয়র পদে যে ভুয়া নির্বাচন হয়েছিল, বিএনপির কর্মকাণ্ড ওই নির্বাচনকেই প্রকৃতপক্ষে বৈধতা দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ ঢাকা মহানগর বিএনপির অন্যতম জনপ্রিয় তরুণ নেতা মাত্র কয়েক দিনের জন্য পলাতক, মহাদুর্নীতিবাজ শেখ তাপসের কলুষিত চেয়ারে বসে কী এমন অর্জন করবেন, তা তিনিই ভালো জানেন। একসময় এই আন্দোলনের জন্য তিনি পস্তাতেও পারেন।

অন্যদিকে ছাত্রদল নেতার মধ্যরাতে রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরকে জড়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করার পেছনেও কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই প্রকার রাজনীতি বিএনপির জনপ্রিয়তা কমাবে বলেই আমার ধারণা। তদুপরি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতাদের চাঁদাবাজির যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেটাও উদ্বেগজনক। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের স্মরণে রাখা উচিত, রাজনীতি জনগণের উপলব্ধির (Perception) ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ভারত প্রশ্নে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই দেশে ১৫ বছর ধরে যে অন্যায় এবং জুলুম চলেছে, তার জন্য জনগণ ভারতকেই প্রধানত দায়ী করে থাকে। এমন অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে যদি ভারত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাহলে সে দলের পক্ষে জনগণের আস্থা ধরে রাখা কঠিন হবে। দুদিন আগে দলটির একজন অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মৌলবাদকে আশকারা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করার ছলে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আলেম সমাজের প্রতি কটাক্ষ করেছেন। তার বক্তব্যের সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদ এবং দিল্লির বয়ানের মিল দেখে দেশের জনগণ চমকে উঠেছে। তবে কি এই রাজনীতিবিদ ও তার দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর ইসলামিস্ট তকমা দিয়ে ফ্যাসিস্ট আমলের মতো জুলুম চালানো হবে? শুধু এটুকু বলে রাখি, জনগণের ভাষা এবং চাহিদা বুঝতে কোনো দল যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে তার মূল্য অবশ্যই সেই দলকে দিতে হবে। বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেশি দিন যে এই দেশে ক্ষমতায় থাকা যায় না, সেটা মহান জুলাই বিপ্লব প্রমাণ করেছে। শহীদ জিয়া যিনি বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ঈমান’ সংযুক্ত করেছিলেন, তার দলের বর্তমান অবস্থান বিস্ময়কর!

সরকারের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের দ্বন্দ্বের মধ্যে অনভিপ্রেতভাবে এবার তৃতীয় পক্ষ রূপে সামরিক বাহিনী আবির্ভূত হয়েছে। কদিন আগে সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য সম্ভবত পরিকল্পনা করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছু বিশ্বস্ত সহকর্মীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যে বক্তব্য রেখেছেন, তার সারসংক্ষেপ ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তর থেকেই ভাইরাল করা হয়। বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লিখিত সারসংক্ষেপটি আমার দেশের কাছে এলেও আমরা রাত ১১টা পর্যন্ত আইএসপিআর কিংবা সেনা সদর থেকে ব্যাখ্যার অপেক্ষায় তা প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিলাম। আমরা চাইনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের কোনো ধরনের দূরত্ব অথবা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হোক। সেই সারসংক্ষেপে ড. ইউনূস সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের হতাশার কথা সেনাপ্রধান ব্যক্ত করেন। সেই হতাশার তালিকার একটি আমার কাছে বিশেষভাবে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। সেনাপ্রধান বেশ খেদের সঙ্গে অন্য জেনারেলদের বলেছেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী নাকি নিজেদের অভিভাবকহীন মনে করছে। ড. ইউনূসের অধীনে যদি সেনাবাহিনী অভিভাবকহীন হয়ে থাকে, তাহলে কি প্রমাণিত ভারতীয় দালাল, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনাই বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পছন্দের অভিভাবক ছিলেন? আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা, শত শত গুম-খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার কুশীলব জেনারেল তারিক সিদ্দিকের অভিভাবকত্বে কেনই বা ধার্মিক সেনাপ্রধানের বিবেক পীড়িত হয়নি?

সারসংক্ষেপ অনুযায়ী সেনাপ্রধান বলেছেন, একমাত্র নির্বাচিত সরকারই সেনাবাহিনীর ‘প্রকৃত অভিভাবক’ হতে পারে। তত্ত্বগতভাবে তার বক্তব্যের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তিন তিনটি ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে বাংলাদেশের জনগণ কি আদৌ নির্বাচিত সরকার মনে করে? যদি শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে থাকেন, তাহলে একজন ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট, ভোট-ডাকাত শাসক কীভাবে সেনাপ্রধানের কাছে ১৫ বছর সেনাবাহিনীর ‘প্রকৃত অভিভাবক’ রূপে বিবেচিত হতে পারেন? শেখ হাসিনা এবং জেনারেল তারিক সিদ্দিক ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে সেনাপ্রধানের কাছে অভিভাবকের মর্যাদা পেতে পারলেও দিল্লিতে পলাতক দানব প্রকৃতির এই নারী ও পুরুষদ্বয় কোনো অবস্থায়ই বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কোনো অফিসার কিংবা সৈনিকের অভিভাবক হতে পারেন না। সেনাপ্রধান এবং অন্য জেনারেলরা যদি শেখ হাসিনার মতো একজন নিকৃষ্ট শাসক, শেখ পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তার নামে তার পরিবারের আন্ডাবাচ্চা এবং খুনি তারিক সিদ্দিককে ১৫ বছর ধরে স্যালুট করে থাকতে পারেন, তাহলে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এত নালিশ গ্রহণযোগ্য নয়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রকাশিত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী এতসব নালিশের মধ্যে কেউ যদি দিল্লির ইশারায় ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আবিষ্কার করার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে বিশেষ দোষ দেওয়া যাবে না।

তবে গত সোমবার সেনা সদরের বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে আশান্বিত হয়েছি। ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতার পটভূমিতে জাতির একান্ত প্রত্যাশা সরকার, প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সামরিক বাহিনীর কর্তারা হুঁশে ফিরবেন। তাদের বিভাজনের কারণে দেশের স্বাধীনতা আবার হুমকির মুখে পড়লে দেশপ্রেমিক জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বরের ঘটনাক্রমে বিশ্লেষণ করুন। আরেকটি জুলাই বিপ্লবের সম্ভাবনাকে তাচ্ছিল্য না করলে আপনারা, দেশ ও জনগণ সুরক্ষিত থাকবে।

যাই হোক, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার আমরা সবাই পাহারাদার। তাই রাষ্ট্রের একজন প্রবীণ নাগরিকের অধিকারে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাব, দিল্লির দাসত্ব থেকে স্বদেশ রক্ষার্থে দ্রুত পারস্পরিক বিভেদ মিটিয়ে ফেলুন। সরকারের দায় এক্ষেত্রে সর্বাধিক। তাই আর বিলম্ব না করে নির্বাচনের যুক্তিসংগত রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সেই রোডম্যাপ না মেনে যদি কোনো দল হঠকারী আচরণ করে এবং অরাজকতা তৈরি করে, তাহলে দেশের জনগণকেই তার জবাব দিতে দিন। বর্তমান সরকারের তিন প্রধান দায়িত্ব হলো, ফ্যাসিস্ট শাসক গোষ্ঠীর বিচার, ভবিষ্যৎ ফ্যাসিবাদ রোধকল্পে শাসনব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন। এই তিন লক্ষ্য পূরণে সরকারকে হয় কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে অথবা অপারগ হলে জনগণকে অবহিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। আমরা ড. ইউনূসের কাছ থেকে সময়ক্ষেপণ ব্যতিরেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রইলাম।