
গত ৯ মাসে ২৭টি নতুন রাজনৈতিক দল জন্ম নিয়েছে। আবির্ভাব হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন পুরাতন মিলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৬৫টি দল। ৪৬টি দল নিবন্ধন আবেদনের জন্য সময় চেয়েছে।
বিগত ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে হঠাৎ জন্ম হয় তিনটি কিংস পার্টির। তারা নির্বাচনেও অংশ নেয়। কিন্তু কোনো আসন না পেয়ে আবার হারিয়ে যায় রাজনৈতিক মাঠ থেকে। বিগত ২০১৩ সালে জন্ম হয় আরেক কিংস পার্টির। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
এ ছাড়া ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও জন্ম হয়েছিল চারটি কিংস পার্টির। পরে সেইগুলো হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন মানতে না পারায় নিবন্ধন বাতিলও হয়েছে কয়েকটি দলের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উর্বর সময় চলছে। আত্মপ্রকাশ করছে কিংস পার্টিও। আর এসব কিংস পার্টিতে ভিড়ছেন ডিগবাজ নেতারাও, যারা বিগত সময়ে অনেক দল বদল করে রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর গত নয় মাসে অন্তত ২৭টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আরও দল আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায়। যেসব দল নতুন আত্মপ্রকাশ করেছে এর মধ্যে রয়েছে- নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, দেশ জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, জনতার দল, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির পার্টি, আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি), জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নতুন ধারা জনতার পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। নতুন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। এসব নতুন দলের মধ্যে অনেকই ইসিতে নিবন্ধন আবেদন করেছে। অনেক দল নিবন্ধন আবেদনের জন্য সময় চেয়েছে। ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। তাতে তিনটি নিবন্ধন শর্ত দেওয়া হয়। ভোটে নিবন্ধিত দলগুলোকেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৮টি আবেদন পড়েছিল। বিগত চার সংসদ নির্বাচন মিলে এ পর্যন্ত ৫৫টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৫টি দলের নিবন্ধন। আর স্থগিত রয়েছে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪৯টি দল নিবন্ধিত। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে।
বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উর্বর সময় চলছে- এমন প্রশ্নের বিষয়ে জনতার দলের সদস্যসচিব আজম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিগত সময় মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না। মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারেনি। গণ অভ্যুত্থানের পর মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারছে। যার কারণে ১৯৯টি দাবি নিয়ে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। আরও দাবি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে মানুষ। অনেকেই আগাম শতর্কবাণীও দিচ্ছেন। নতুন দল গঠনকে নেগেটিভ হিসেবে দেখছি না। যারা মজা করার জন্য দল গঠন করছে জনগণের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা বিলীন হয়ে যাবে। জনতার দল ডিসেম্বরে আত্মপ্রকাশের পর ৫৫টি আসনে এমপি প্রার্থী নির্ধারণ করেছি।
বর্তমানে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উর্বর সময় চলছে এবং এ সময়ে জন্ম নেওয়া পার্টিগুলোকে অনেকেই কিংস পার্টি বলছেন। এ বিষয়ে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো এসেছে প্রত্যেকটা বিপ্লব বা গণ অভ্যুত্থানের পর। পরিবর্তনের পরে ১৯৭৫ সালে যখন পলিটিক্যাল পার্টি রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটা অ্যাক্ট হলো। তখন ৭০টি পার্টি ওই অ্যাক্টের অধীনে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছিল। এখন যে দলগুলো হচ্ছে- তার মধ্যে অনেকেই ইসিতে আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি। তারা নিচ্ছে। আরেক দল হাই কোর্টে মামলা করেছে সেখান থেকে হচ্ছে।
বিগত সময় কিংস পার্টির জন্ম হয়েছে। এখনো কিংস পার্টি জন্মের সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিংস পার্টি জন্মের সম্ভাবনা, যেটা এনসিপিকে নিয়ে কথা বলেছে। এনসিপির মধ্যে কিছুটা কিংস পার্টির ইয়ে আছে। এ জন্য যে, যারা গণ অভ্যুত্থানকে সফল করেছেন। সেই তরুণদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন- তোমরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করতে পার। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সরকার এখানে কোনো ব্যাংকিং দিচ্ছে না। কিছু উপদেষ্টা তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের এজেন্ডা নেই। এ জন্য বলছি ওইভাবে কিংস পার্টি আসছে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আমরা মূলত আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা অর্গানিক একটা সংগঠন। এটাকে যারা সংগঠিত করেছেন তারা অর্গানিকলি আন্দোলনের মধ্যে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের দলের প্রধান সরকারের প্রধান না। আমাদের দলের বেশির ভাগ নেতা এখনো আন্দোলনকারী। তারা সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন না। একজন মাত্র আমাদের ছাত্রপ্রতিনিধি যে এসেছেন সেও কিন্তু তার সব সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করেই আমাদের দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা যদি সরকারি দল হতাম তাহলে বলা যেত যে, কিংস পার্টি। অথচ আমরা দাবি করলাম সেকেন্ড রিপাবলিক। বিএনপিসহ অপজিশন পার্টিগুলো মানল না। সেকেন্ড রিপাবলিক এখন পর্যন্ত আমরা করতে পারিনি যা আমাদের দাবির মধ্যে রয়েছে এখনো। আমরা দাবি করলাম রাষ্ট্রপতি, যুবলীগ নেতা চুপ্পুকে অপসারণ করতে। বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর অসম্মতির কারণে আমরা সফল হলাম না। তার মানে আমরা সরকারে না। যদি আমরা সরকারে থাকতাম, কিংস পার্টি হতাম আমরা তো এগুলো বাতিল করতাম।