Image description

গুলিস্তানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্যানার লাগিয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠন। দুই-একদিনের মধ্যে এখানে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এর কয়েকজন সদস্য।

অন্যদিকে রবিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানহ কতিপয় নেতাকর্মীর ফেসবুক পেজ থেকেও এমন প্রচারণা চালানো হয়। এ খবর শুনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় সেখানে ছুটে যান কথিত জুলাই যোদ্ধাদের কয়েকজন। যদিও তারা কাউকে খুঁজে পাননি।

রবিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ভবনটির পাঁচতলায় একটি বড় ব্যানারে লেখা ‘জুলাই যোদ্ধাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়’। ব্যানারটির এক পাশে রয়েছে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ এবং অপর পাশে ঢাকার শহীদ মীর মুগ্ধের ছবি।

আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ব্যানার

আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ব্যানার

কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত কয়েকজন নিজেদের জুলাই যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেন। এর মধ্যে হোসাইনুজ্জামান নামে একজন জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সেখানে তারা ব্যানার লাগিয়েছেন। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়।

তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা নামের সংগঠনের অসংখ্য সদস্য রয়েছে। কার্যালয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন দেখতে পাবেন। অবশ্য এর কেন্দ্রীয় দায়িত্বে কারা রয়েছেন তা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আরেক সদস্য মিনহাজুল জানান, ভবনটিতে লোকজন মল-মূত্র ত্যাগ করার কারণে তারা ভেতরে যান না। তবে কতিপয় মাদকসেবী ও যৌনকর্মী আসা-যাওয়া করে থাকে।

আ.লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন তারা

আ.লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন তারা

তিনি আরও জানান, আজ থেকে তাদেরও ঢুকতে দেবেন না এবং দুই একদিনের মধ্যেই এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হবে।

অন্যদিকে সন্ধ্যায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলমুক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। বলা হয়, তারা নাকি মিছিল নিয়ে সেখানে গিয়ে কার্যালয়টি নিজেদের আয়ত্তে নেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ফেসবুক থেকে পোস্ট করা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস দখলমুক্ত করেছে কয়েকজন জেলা-মহানগর ইউনিটের ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এখনও দালালি বাদ দেন। সত্যকে সত্য বলতে শিখুন। আওয়ামী লীগ মানেই ছাত্রলীগ। প্লিজ নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং করবেন না। দখলমুক্ত করছেন ছাত্রলীগ নেতারা। যুবলীগের নাম দেবেন না। পার্টি অফিসের সামনে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কেউ যায়নি।’

কার্যালয় ঘিরে মানুষের ভিড়

কার্যালয় ঘিরে মানুষের ভিড়

এমন বিভিন্ন পেজ থেকে এ প্রচারণা চললেও এর সত্যতা মেলেনি। আশপাশের ব্যবসায়ীরাও তা জানেন না বলে জানান। তবে লোকজন যারা আসছেন তারা আওয়ামী লীগের কেউ নন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান একাধিক ব্যবসায়ী। তাদের ধারণা, এরা নব্য দখলদারদেরই লোক।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সর্বশেষ গুলিস্তানে স্থানান্তরিত হয় ১৯৮১ সালে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ৮ কাঠা জমির ওপর ১০ তলা সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই ছিল দলীয় তহবিলের টাকা। ২০১৮ সালের ২৪ জুন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনেই ভবনটিতে আগুন দেয় জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতা। সেই থেকেই পরিত্যক্ত ভবনটি গণশৌচাগার ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।