
নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশের ঐতিহ্যবাহী একাধিক মাদরাসা। সাফল্য আর সুনামের দিক দিয়ে দেশের এ মাদরাসাগুলো তাদের স্বীয় নাম আর ফলাফলের দিক দিয়েও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছে। এসব মাদরাসার মধ্যে সবচেয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতোমধ্যে দেশসেরা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদরাসাটিও দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে সুনামের সাথে এগিয়ে চলছে। একইসাথে ঢাকার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা এবং বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের শর্ষীনা দারুস সুন্নাত কামিল মাদরাসাও এক শত দশ বছরের পুরনো ঐতিহ্য এখনো স্ব-মহিমায় ধরে রেখেছে। এসব মাদরাসা থেকে দেশসেরা আলেম তৈরির পাশাপাশি দক্ষ যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বও তৈরি করেছে। দেশের এমন কোনো সেক্টর খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা তা‘মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট পরিচালিত একটি দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের দ্বিমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে ইসলামী ও জাগতিক শিক্ষার বাস্তব সমন্বয়সাধন করে গড়ে তোলা হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের বুনিয়াদ। ১৯৬৩ সালে খুবই ছোট পরিসরে এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম। পরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ১৯৮৮ সালে মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর কামিল শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হয়। বর্তমানে গাজীপুরের বিশাল ক্যাম্পাসে কামিল শ্রেণিতে হাদীস, তাফসির, ফিক্হ ও আদব বিভাগ এবং ফাযিল শ্রেণিতে পাস কোর্সের পাশাপাশি আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আদ্-দাওয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য এ পাঁচটি বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাওলানা খলীলুর রহমান মাদানী নয়া দিগন্তের এ প্রতিবেদককে জানান, পুরনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের অর্জন অনেক। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকেই জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। একই সাথে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ১ম থেকে ১০ম এর মধ্যে অবস্থান করার মতো গৌরবও রয়েছে। প্রতি বছর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজে উল্লেখযোগ্য ছাত্র ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। গত কয়েক বছরে এ প্রতিষ্ঠানের কৃতী ছাত্রদের একটি অংশ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে।
অপরদিকে শর্ষীনা দারুস সুন্নাত কামিল মাদরাসাটি একটি ঐতিহ্যবাহী দেশসেরা মাদরাসা। সারা দেশে এ প্রতিষ্ঠানটি শর্ষিনা মাদরাসা নামেও পরিচিত। মাদরাসাটি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার শর্ষীনা গ্রামে অবস্থিত একটি কামিল মাদরাসা। ১৯১৫ সালে পীর আল্লামা শাহ সূফি নেছারুদ্দীন আহমদ এ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত টাইটেল (কামিল) মাদরাসা। এ মাদরাসা ফলাফলের দিক থেকে সর্বদাই দেশের শীর্ষ স্থান দখল করে থাকে। এ মাদরাসা নীতিনৈতিকতা ও আকিদা এবং আদবের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য সারা দেশে পরিচিত। এ মাদরাসার তথ্যভান্ডার থেকে জানা যায় এ পর্যন্ত এ মাদরাসা থেকে ৩০০ ছাত্রের বেশি বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে। ১৯২৭ সালে অধ্যক্ষ মৌলভী ইসহাকের প্রচেষ্টায় মাদরাসাটি সরকারি অনুমোদন লাভ করে।
১৯২২ সালে আলিম, ১৯৩১ সালে ফাযিল ও ১৯৪২ সালে কামিল শ্রেণীর জন্য সরকারি অনুমোদন পায়। ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো এ ক্যাম্পাসে একটি বৃহৎ অবকাঠামো স্থাপিত হয়।
ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদরাসাটিও কালের পরিক্রমায় তার স্বীয় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ১৯৫৬ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছাত্রের পদচারণায় মুখরিত এ মাদরাসাটি অনার্স- মাস্টার্সসহ দাখিল, আলিম ও ফাজিল, কামিল (হাদিস, তাফসির, ফিকহ ও আদব) ফলাফলে শীর্ষস্থান অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেছে। এসব পুরনো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গত দুই দশকে আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে ঢাকায় গড়ে উঠেছে আরো বেশকিছু আধুনিক বেসরকারি মাদরাসা। তানজিমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আধুনিক ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তানজিমুল উম্মাহ মাদরাসার একাধিক শাখা ও বিভাগ। পৃথক হিফজ বিভাগ ছাড়াও ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমেও পড়ালেখা করিয়ে শিক্ষার্থী গড়ে তুলছেন তারা। অপর দিকে ২০০৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ইতোমধ্যে অভিভাবকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত নিবরাস মাদরাসা। রাজধানীতেই একাধিক শাখা পরিচালনা করছে নিবরাস। এ দু’টি মাদরাসা বিশ্বমানের কুরআনের হাফেজ তৈরি করে দেশবাসীর মধ্যে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।