
নতুন এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিএনপি। সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে আগামী দুই মাসে এই লক্ষ্য পূরণ করতে চায় দলটি। আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া এই কর্মসূচি চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রাথমিক সদস্য নবায়নসংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সেখানে ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ তথ্য জানান।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এবার শুধু নবায়ন নয়, আগামী ১৫ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত নবায়ন এবং দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা আমাদের টার্গেট অনুযায়ী এবার দ্রুত গতিতে দেশব্যাপি এক কোটির অধিক প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করব ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃসময়ে স্বাভাবিকভাবে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম করা যায়নি। প্রায় দিনের পর দিন তারা এই দলীয় কার্যালয় (নয়াপল্টন) আক্রমণ করেছে, আমাদের দলের প্রয়োজনীয় যে জিনিসপত্র থাকে- কম্পিউটার, টাইপ রাইটার, ফ্যাক্স মেশিন ইত্যাদি তারা (আওয়ামী শাসনামলে পুলিশ) ভাঙচুর করেছে। এই দলীয় কার্যালয় কতবার যে ভাঙচুর-তছনছ করেছে, কম্পিউটার, দলিল, ফাইল সব রাস্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেক কিছু তারা এখান থেকে নিয়ে গেছে। সেই পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে পুনর্গঠন করা আমাদের জন্য কঠিন ব্যাপার, সেটা আমাদের করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল করতে কত লোক আগ্রহী, সেটাও আমাদের যে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে- এই অভিযানের মধ্য দিয়ে জানতে পারব। সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষ যারা বিএনপিকে পছন্দ করেন, যারা বিএনপিমনা, যারা জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা লালন করেন, তারা আগ্রহী হয়ে এই দলের সদস্য হবেন- এই আমরা প্রত্যাশা করি। কারণ, এখন শেখ হাসিনার সেই ভয়ংকর দুঃশাসনের ছোবল নেই। সেক্ষেত্রে অনেকেই এগিয়ে আসবেন। এই এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে আমাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের কেউ বিএনপিতে যোগ দিতে পারবেন কিনা?-ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রিজভী বলেন, কেউ দীর্ঘদিন রাজনীতি করেননি অথবা আওয়ামী লীগের আমলেও যারা হয়তো এক সময়ে আওয়ামী লীগ করতেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, আওয়ামী লীগের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড, লুটপাট, টাকা পাচার- এসবকে যারা পছন্দ করেনি কিংবা নিজেরাও এসব করেনি- এই ধরনের মানুষ হয়তো আওয়ামী লীগ থেকে সরে গেছেন, তারা আসতে পারবে না কেন?
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও আমাদের চিন্তা হলো সমাজের ফ্রেশ মানুষ- একজন ভদ্রলোক হয়তো রিটায়ার্ড করেছেন, তিনি অন্তরে বিএনপি লালন করেন, তিনি একজন শিক্ষক হতে পারেন, একজন গভর্মেন্ট অফিসার হতে পারেন, একজন ব্যাংকার হতে পারেন, একজন এনজিও কর্মী-কর্মকর্তা হতে পারেন, একজন কৃষক হতে পারেন, একজন শ্রমিক হতে পারেন- এক্ষেত্রে কোনো ক্রাইটেরিয়া নেই। তিনি আমাদের যে আদর্শ, সেটা বিশ্বাস করেন কিনা- সেটাই মুখ্য।
রিজভী বলেন, আমরা প্রাইমারি মেম্বারের জন্য যে রশিদ দেই, ২০ টাকা দিয়ে যে ফরমটা পূরণ করতে হয়- এর সঙ্গে এবার একটা অঙ্গীকারনামা যাকে আবেদনপত্র বলি- সেটা আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে, এবার যারা প্রাথমিক সদস্য হবেন, তাদেরকে এই আবেদন ফরমটা পূরণ করতে হবে। পরে সেসব ফরম যাচাইবাছাই হবে।
যাচাইবাছাই করে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কারণ দোসররা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, জমি দখল করেছে, টাকা পাচার করেছে- তারা তো নানাভাবে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে। সেটাকে খুব শক্তভাবে এড়িয়ে গিয়ে একেবারে ফ্রেশ মানুষ- সমাজে যাদের সুনাম আছে, এলাকার মধ্যে যাকে ভদ্রলোক বলে জানে, তারা যাতে আমাদের দলের সদস্য হতে কোনো ধরনের বাধার মুখে না পড়েন- আমরা সেটাই টার্গেট করব। সেখানে সজ্জন মানুষ যারা- কৃষক, শ্রমিক, এছাড়া যুবক-তরুণ তো আছেই, সবাই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, সৈয়দ শাহিন শওকত, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।