Image description

নির্বাচনকে মাথায় রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে জামায়াত। লক্ষ্য দলের ইমেজ উদ্ধার এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্ক জোরদার। গত নয় মাসে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের আগমন, দলের আমীরসহ প্রথম সারির একাধিক নেতার একের পর এক বিদেশ সফরের মাধ্যমে এই তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলীয় অবস্থান তুলে ধরা এবং জামায়াতবিরোধী পক্ষের নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এসব বৈঠক ও আলোচনায়। 

৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাতারাতি পাল্টে যায় ৫০৫ বড় মগবাজারের জামায়াতের দলীয়  কার্যালয়ের চিত্র। একের পর এক আগমন ঘটে বিদেশি মেহমানদের। এ সময় প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকা কার্যালয়টি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। 

গত ৯ মাসে অন্তত ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের সঙ্গে নিবিড় বৈঠক করেছেন দলের আমীরসহ শীর্ষ নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনসহ প্রভাবশালী  বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের আমীর, সেক্রেটারি জেনারেলসহ একাধিক নেতা। প্রায় সপ্তাহব্যাপী জাপান সফর শেষে গত মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন আমীর ডা. শফিকুর রহমান। একই দিন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। ধারাবাহিক এসব তৎপরতার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরছে জামায়াত। তারা প্রমাণ করতে চাইছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামায়াত সম্পর্কে যেসব বার্তা দেয়া হয়েছে, সেগুলো ‘ভুল, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই জামায়াতে ইসলামীকে ‘জঙ্গি, উগ্রবাদী, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীসহ নানা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে। এসব প্রোপাগান্ডার মুখে সংগঠনটিকে কোণঠাসা রাখার নীতি ছিল আওয়ামী সরকারের। সময়ের পরিবর্তনে ধীরে ধীরে ওইসব অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিচ্ছে জামায়াত। এরই মধ্যে শক্তিশালী করা হয়েছে জামায়াতের কূটনৈতিক শাখাকে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বৃটেন, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। গত ৮ই মার্চ ইফতার মাহফিলে ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় সব দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে আসা জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। 

জুলাই বিপ্লবের পর কূটনীতিকদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সর্ব প্রথম জামায়াত অফিস পরিদর্শন ও একান্ত বৈঠক করেছেন। ২০২৪ সালের ২রা সেপ্টেম্বর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ সময় চীনা দূতাবাসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর সহ আরও দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ৮ই অক্টোবর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক। তিনিও জামায়াতের আমীর ও শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৪ই অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমীর ড. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) নার্দিয়া সিম্পসন। ১৬ই অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন ও জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২৬শে নভেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন। ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি জামায়াত আমীরের সঙ্গে দেখা করেন। ১৩ই জানুয়ারি আমীরের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস ফেরেস। ৮ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দোহাইলানের সঙ্গে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে দেখা করেন জামায়াতের আমীর। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি জামায়াতের আমীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। গত ১০ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি. মাইলাম ও জন ড্যানিলোভিচ জামায়াতের আমীরের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ১১ই মার্চ আমীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। ১৩ই মার্চ জামায়াত আমীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন। এদিকে দেশে বিদেশিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পাশাপাশি বিদেশে সমান তালে তৎপর রয়েছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। ৯ মাসে দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ একের পর এক সফরে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের এসব নেতা। এরই মধ্যে জামায়াত আমীর যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মালয়েশিয়া ও কুয়েত ও জাপান সফর করেছেন। আর সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সফর করেছেন জাপান ও তুরস্ক। এ ছাড়া আমীরে জামায়াতের নেতৃত্বে শীর্ষ নেতাদের একটি দল চীন সফর করেছে। 

জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের কেন্দ্রসহ দেশের প্রায় সব অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। ৫ই আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্ব বাড়িয়েছি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় করেছি। বাংলাদেশ ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই সব দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। এসবের মাধ্যমে আমরা বিদেশি বন্ধুদের তরফে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।