
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জোরালো হচ্ছে নির্বাচনের দাবি। এ নিয়ে নানা যুক্তি ও প্রস্তাব তুলে ধরছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে কয়েকটি দল সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। কোনো কোনো দল অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা অনুচিত বলেও মন্তব্য করেছে। সংস্কার প্রস্তাবের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সরব হয়ে উঠছে তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এ পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দল সংস্কার নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। প্রতিটি দলই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় তাঁর প্রতি এ দাবি জানিয়েছে দলগুলো। তাদের যুক্তি সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচিত সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারে। কোনো কোনো দল সংস্কারের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া মুখোমুখি দাঁড় করানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সংস্কার সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের কাছে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ কমিশনকে সিরিয়াসলি সহযোগিতা করছেন বলে জানান। পাশাপাশি বেশির ভাগ সংস্কার নির্বাচিত সরকার করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ মূলত দ্রুত নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন বলে জানান দলটির নেতারা। সংস্কার সংলাপের পর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘ক্রেডিবল এবং সাসটেইনেবল ডেমোক্র্যাসির ব্যাপারে জামায়াত অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে নয়, আমাদের দলের ভিতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করি। আমরা এমন নির্বাচন চাই, যেটিকে দেশের মানুষ নির্বাচন বলবে। সারা দুনিয়া নির্বাচন বলবে। আমরা সুষ্ঠু স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে। এ ব্যাপারে আমাদের কো-অপারেশন থাকবে, টু মেক ইট ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পরে বলেন, নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। তার আগে বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করতে হবে। এর জন্য যেটুকু সময় পাওয়া প্রয়োজন, সরকার সে সময়টুকু পেতে পারে। কোনোভাবেই কাজ ব্যতিরেকে সময় পেতে পারে না। সংস্কার সংলাপে অংশ নিয়ে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। আমরা তাঁর কথায় বিশ্বাস রাখি।’ নির্বাচনের সময়সীয়া নির্দিষ্ট হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পরে যদি নির্বাচন নিতে হয়, তাহলে কী কারণে নিচ্ছে, সেটি ব্যাখ্যা করতে হবে। সংস্কার কার্যক্রমের আইনি বৈধতা নেওয়ার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চেয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ভবিষ্যতে যেন কেউ সংস্কার কিংবা জাতীয় সনদকে আইনি বা কোনোভাবে যেন চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, বাতিল করতে না পারে। গণভোটের পরে জাতীয় নির্বাচনের আশা করে দলটি।
১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যথাসময়ে নির্বাচন দাবি জানিয়েছি।’ জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘ঐকমত্য হওয়া একান্ত জরুরি। ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে নির্বাচন দাবি জানিয়েছি।’ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হোসেন বাবুল জানান, যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো শেষ করে নির্বাচন দিয়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গিয়ে অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন থাকায় দেশে নানা সমস্যা দেখছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা ওনার কাছে (ড. ইউনূস) এটাই আশা করি যে আপনি এমন একটা ভোটের ব্যবস্থা করে দিন, যাতে মানুষ বলতে পারে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমরা এমন একটা ভোট দেখতে পেরেছি।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ এখন পর্যন্ত আমি লক্ষ করি না। প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন এমনকি ঐকমত্য কমিশনের কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই তিনি বলেছেন, একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তিনি নির্বাচনটা দেখতে চান। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনও কাজ করেছে কিছুটা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতিও আমি দেখতে পাই। ফলে এ কারণে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে বা এ কারণে নির্বাচনের দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেবে- এরকম কিছু আমার কাছে মনে হয় না।’