Image description

Sarwar Tusher (সারোয়ার তুষার)


একদল এনসিপিকে নারীবিদ্বেষী দেখাতে মরিয়া, আরেক দল এনসিপিকে ইসলামবিদ্বেষী লেবেলিং করতে মরিয়া। বাস্তবে এনসিপি এর কোনোটাই নয়।
 
দল হিসেবে এনসিপি একমাত্র যারা সরাসরি ১০০ আসনে নারী প্রার্থী নির্বাচনের প্রশ্নে একমত হয়েছে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিও জোর দিয়েছে।
এনসিপির নারী অবস্থান নিয়ে যারা উচ্চকিত, তারা বাকি দলগুলোকে এ ইস্যুতে প্রশ্ন করছেন না কেন?
 
বাংলাদেশে ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতি চলবে না। একইসাথে নারী বিদ্বেষও চলবে না। ইসলাম বনাম নারী খতরনাক এক বাইনারি খেলা, এই খেলার ফাঁদে এনসিপি পড়তে চায় না।
 
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নারীর পক্ষে দাঁড়ানো মানে আমাকে বলতে হবে “ধর্মগ্রন্থগুলো পুরুষের সৃষ্টি, বৈষম্যমূলক।” না, আমি হুমায়ূন আজাদ মার্কা এ ধরনের বালখিল্য প্রগতিশীলতার ধার ধারি না।
কারণ এটা অনৈতিহাসিক ও বিদ্বেষপ্রসূত। এই বক্তব্য বাংলাদেশের আপামর নারীরাই গ্রহণ করবেন না। তারা ধর্ম বিশ্বাসী এবং নিজেদের অধিকার প্রশ্নে অবিচল।
 
হাতে গোণা অল্প কিছু নারী ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন হতে পারেন, সে স্বাধীনতা তাদের আছে। কিন্তু সেটাকেই নারী স্বাধীনতার মানদণ্ড হিসেবে এস্টাবলিশ করতে চাইলে তা বুমেরাং হবে।
অবস্থাদৃষ্টে আরও মনে হচ্ছে, নারীর অধিকার ও মর্যাদা চাইলেই, কেউ শাহবাগী, নাস্তিক, নারী হলে ‘বেশ্যা’! এ বক্তব্যও চরম অগ্রহণযোগ্য ও গর্হিত অন্যায়।
ধর্ম মেনে কিংবা ধর্মীয় অনুশাসনে থেকে নারীর অধিকার হবে না, এটা বাস্তবসম্মত চিন্তা নয়।
 
ধর্ম পালনের স্বাধীনতা লিবারেল গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান এক স্তম্ভ। লিবারেলিজম আর প্রগতিশীলতার নামে ধর্মহীনতা যারা চাপিয়ে দিতে চান, তারা ফ্যাসিস্ট।
একইভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা মানে কারো ব্যক্তিগত বিশ্বাস/অবিশ্বাসের ওপর ফ্যাসিবাদী হস্তক্ষেপ নয়। ধর্ম মানুষ মন থেকে পালন ও বিশ্বাস করে।
ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয় নাই; তদ্রুপ ধর্মহীনতাও চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
 
নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে সব রাজনৈতিক দল চুপ। কিন্তু এনসিপি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েও ‘নারীবিদ্বেষী’! এই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান স্রেফ রাজনৈতিক কৌশল নয়; এনসিপির নীতিগত অবস্থান। যারা এনসিপিকে নারীবিদ্বেষী ও ধর্মবিদ্বেষী হিসেবে দেখতে চায়, তারাই এতে বেশ বেজার হয়েছে দেখা যাচ্ছে!
 
এনসিপি বলছে:
নারী সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে (integrity) সম্মান জানিয়ে এবং সকল নাগরিকের বিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নীতি প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নারী কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারী মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সকল প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনদের সাথে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।
 
প্রস্তাবনার সমালোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ থেকে নারীদের প্রতি প্রকাশ্যে যে শ্লেষাত্মক ও অমর্যাদাকর বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এনসিপি। বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে তো বটেই বিশেষত জুলাই আগস্টের ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে সকল শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, বর্ণের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের ফলে পনের বছরের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদ থেকে জাতির মুক্তি ঘটেছে। এই ইতিহাসকে আমরা ভুলব না।
এনসিপি নারীদের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সামাজিক সংগ্রামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতীয় নাগরিক পার্টি নারীদের সাথে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ।
ধর্মবিদ্বেষ ও নারীবিদ্বেষ নিপাত যাক!