Image description

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতাদের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের মামলা পরিচালনা করেন তিনি।

ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সা‌লে তি‌নি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যা‌রিস্টার ডিগ্রি অর্জন ক‌রেন। ১৯৮৫ সা‌লের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ড‌নেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছি‌লেন।

দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন। ১৯৮৬ সালেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

এক-এগারোর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে আমলে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বিচার শুরু হয়। দল হিসেবেও জামায়াতে ইসলামীকে যখন নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত যখন নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে রাজনীতি শুরু করার চিন্তা করছে, তখনই দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা পদত্যাগ করেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। যখন তিনি যুক্তরাজ্যে ছিলেন, ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। এ খবরে তখন আলোচনা শুরু হয়। সে সময় তাকে অনুসরণ করে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা দলত্যাগ করেছিলেন বলে জানা যায়।

 

জামায়াতের রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার পেছনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলটির ক্ষমা না চাওয়া, দলটির নাম পরিবর্তন না করার বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের অনড় অবস্থান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সংস্কার করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের দল থেকে পদত্যাগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমরা দীর্ঘদিন একই সঙ্গে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সিনিয়র পর্যায়ের দায়িত্বশীল ছিলেন। তার অতীতের সকল অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা আশা করি তার সাথে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আমার বাংলাদেশ পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় ফেরেন। ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।

বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচারণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।’

গুরুতর অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন ধরে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার (৪ মে) বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশসেরা ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা ও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্বে ছিলেন।

ব্যা‌রিস্টার রাজ্জাকের দুই ছে‌লে ও এক মে‌য়ে রয়েছে। দুই ছেলে ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।