
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়ি যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন গাজীপুর জেলার এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। রাত নয়টায় চান্দিনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতা-কর্মীরা। পরে রাতে একই স্থানে মশালমিছিল বের করা হয়।
রোববার বিকেলে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস নিয়ে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁর গাড়িচালক ছিলেন মো. দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, হাসনাত আবদুল্লাহ ব্যক্তিগত কাজে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সন্ধ্যার কিছু আগে বের হয়ে গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন থেকেই পেছনে কয়েকটি মোটরসাইল তাঁদের অনুসরণ করতে দেখা যায়। চান্দনা চৌরাস্তা পার হওয়ার পরেই মোটরসাইকেল থেকে কয়েকটি ঢিল ছুড়ে মারলে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। লাঠি দিয়েও গ্লাসে আঘাত করা হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সালনার গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁর গাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। হামলায় তিনি হাতে আঘাত পান এবং গাড়ির গ্লাস ও উইন্ডশিল্ড ভেঙে যায়।
দুর্বৃত্তদের হামলায় হাসনাতের গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেলে তাঁর কনুইয়ের কয়েক জায়গায় কেটে যায় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে ওই স্থান ত্যাগ করে হাসনাতের গাড়িবহর বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয়। পরে তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাঁকে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশের আরেকটি গাড়ি দিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার তথ্য জানান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশপাশে যাঁরা আছেন হাসনাতকে প্রটেক্ট করুন। কমেন্টে লোকেশন দিচ্ছি।’
হামলার খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে অবস্থান করছেন। ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন স্থানীয় কারখানার শ্রমিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, কয়েকজন মিলে তাঁরা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল একটি গাড়িতে ঢিল ছুড়ে কয়েকটি আঘাত করে দ্রুত চৌরাস্তার দিকে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আওলাদ হোসেন বলেন, কোনো কিছু বোঝার আগেই গাড়িতে কয়েকটি ঢিল দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলে যারা ছিল তারা যুবক বয়সের।
আইইউটির সামনে অবস্থান করার সময় ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসনাত আব্দুল্লাহ্ বলেন, ‘এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না, পরে কথা বলব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সানিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা যে এদিকে আসবেন আমরা এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। গাজীপুরে তাঁর কোনো পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল না। তবে এনসিপির গাজীপুরের কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি জানেন কি না, তা আমরা জানি না।’