
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যাসহ অন্যান্য গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মামুনুল হক বলেন, প্রথম দাবি হলো- আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা। দ্বিতীয় দাবি- তাদের বিচার নিশ্চিত করা। যদি নিরপেক্ষভাবে বিচার করা হয় তাহলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল এতে বাংলাদেশের কোনো একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করার জন্য নিরপরাধ মানুষ আওয়ামী লীগে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগকে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, জনগণের টাকায় হেলিকপ্টার, বন্দুক, পিস্তল, গুলি তাদের দেওয়া হয়েছে দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য, দেশের ছাত্র-জনতাকে খুন করার জন্য নয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তার নির্দেশে ২০০৯ সালে পিলখানায়, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে, ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা এ দেশের মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার ল্যাসপেন্সারদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। হাতুড়ি লীগের পরিণত হওয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগকে শেখ হাসিনা এ দেশের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তাদের খুন করিয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন সংস্কার প্রশ্নে বক্তব্য পরিষ্কার করেছি। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার হতে হবে, সংবিধান সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সে উদ্যোগ অনুযায়ী বাহাত্তরের বাকশালি সংবিধান বাতিল করে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আগস্ট বিপ্লবের চেতনার আলোকে নতুন করে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। সেই সংস্কার করে নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর যথা দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।
মামুনুল হক বলেন, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে একবার ছিনতাই করা হয়েছিল। ২৪ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর ২৫ সালে বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনতাই করার জন্য কুচক্রীরা আবার উঠেপড়ে লেগেছে। এবার আর বাহাত্তরের মতো ভেজাল চেতনার আড়ালে একাত্তরের চেতনাকে হারাতে দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদী চেতনাকে বাংলাদেশ থেকে যেভাবে উৎখাত করা হয়েছে আর সেই চেতনা বাংলার রাজনীতিতে আর কোনো দিন পুনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বর্তমান সংস্কার কার্যক্রমকে আলেম সমাজ ও ইসলামি সংগঠনগুলো স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে নারী অধিকার বিষয়ক যে প্রস্তাবনাগুলো জমা দিয়েছে সেগুলো দেখে দেশপ্রেমিক তৌহিদি জনতা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ গণসমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি ক্বারি মো. আতাউল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইব্রাহিম খলিলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শারাফাত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, মাওলানা এনামুল হক মুসা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ।