Image description

কুমিল্লার রাজনীতিতে একসময় যিনি ছিলেন সব কিছু নিয়ন্ত্রণকারী, সেই সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দিন এখন একেবারে বদলে গেছে। একের পর এক হাতছাড়া হচ্ছে তাঁর গড়ে তোলা সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাব। সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে জব্দ হচ্ছে তাঁর নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাংক হিসাব ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক এমপি বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থেকে দীর্ঘদিন ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের সময় প্রার্থী নির্ধারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, কালো মাইক্রোবাসে করে ক্যাডার বাহিনী পাঠানোসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

ঢাকায় বাহাউদ্দিন বাহারের একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট থাকলেও বেশির ভাগ সময় তিনি থাকতেন কুমিল্লা নগরীর এ বাসায়। এখানে বসেই কুমিল্লা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তাঁর বাড়ি ও অফিস ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকত। বাড়ির সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকত বিলাসবহুল গাড়ি। বাড়িটি হয়ে উঠেছিল তাঁর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।

বাহারের সেই বাসা এখন ফাঁকা পড়ে আছে, অফিস তালাবদ্ধ। নগরীর মুন্সেফবাড়ির বাসাটিতে এখন সুনসান নীরবতা। বাড়ির সামনের রাস্তায় ছোট ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। এলাকার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে যাওয়া মুসল্লিরাও আর অতীতের মতো আতঙ্কে থাকেন না।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। দেয়ালে এখনো আগুনে পোড়ার চিহ্ন। বাড়িটির আর কোনো দেখভালও হয় না।

স্থানীয়রা বলছেন, বাহার, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা সীমান্তপথে ভারতে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও নির্মাণ শ্রমিক মো. আবুল কাশেম বলেন, বাহারের বাড়িটি এখন পড়ে আছে ফাঁকা। দেখভালের জন্য কেউ নেই। ভয়ে কেউ আসতেও চায় না। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের সহিংসতার পর থেকেই বাড়িটি এভাবে রয়েছে। সামনে-পেছনে এবং দেয়ালে আগুনের পোড়া দাগ এখনো স্পষ্ট। এখনো প্রায় প্রতিদিন মানুষ পোড়া বাড়িটি দেখতে আসছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর সাবেক এমপি বাহার, তাঁর স্ত্রী ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা সীমান্তপথে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

বাহারের বাড়ির সামনে থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বাহারের এমন পতন হবে, তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন, তা কল্পনাও করিনি।

বাহারের নিয়ন্ত্রণে থাকা কুমিল্লার বেশ কয়েকটি মার্কেট ও ভবনও এখন তাঁর হাতছাড়া। রামঘাটলার মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও টাউন হল সুপারমার্কেট থেকে শুরু করে তাঁর মালিকানাধীন সোনালী আবাসিক হোটেলও ছাড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সোনালী স্কয়ার মার্কেটে এখনো বাহারের মালিকানায় শতাধিক দোকান রয়েছে। তবে সেগুলোর ভাড়া কোথায় জমা হচ্ছে, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের সন্দেহও উঠেছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক আবু রায়হান অভিযোগ করেন, বাহার ও তাঁর মেয়ে সূচনার নির্দেশেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর ন্যায়বিচার দাবি করছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আমিরুল কায়সার কালের কণ্ঠকে বলেন, বাহার অবৈধভাবে টাউন হলের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ভাড়া বাবদ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করতেন। এখন সেই টাকা সরাসরি টাউন হলের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা হচ্ছে।

এখনো বাহারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।