
সম্প্রতি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। একইসঙ্গে এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দিতে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানকে ওপেন চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন সারজিস।
রোববার (২৭ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ দেন তিনি।
পোস্টে সারজিস লিখেছেন, কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপপ্রচার, মনগড়া তথ্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে কমেন্টে রিপ্লাই করেছি। বাকিগুলো এড়িয়ে গিয়েছে। যে অভিযোগগুলোর সাথে দূর-দুরান্তেও আমি আমার কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাইনি সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা কীভাবে সম্ভব? বরং পিছনে লেগে থাকা শত শত প্রোপাগান্ডা মেশিনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দেয়া শ্রেয় মনে করি। সর্বশেষ ৮-৯ মাসের এই অল্প সময়ে এত প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি যে এমন প্রোপাগান্ডা স্বাভাবিকভাবেই এখন ফেস করতে হবে এবং সামনের দিনে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে অভিযোগ তোলার ক্ষেত্রে কোনো জাজমেন্ট নেই দাবি করে তিনি লিখেছেন, খারাপ লাগার বিষয় এটাই যে, কেউ একজন একটা লেখা লিখলো কিংবা কোনো একটা নিউজে একটা লেখা আসলো- এটাকেই অনেকে সত্য মনে করে, সে অনুযায়ী জাজমেন্ট শুরু করে। অভিযুক্ত আর দোষী এক বিষয় নয়। একটা অভিযোগকে সত্য মনে করার পূর্বে আদৌ তার সত্যতা আছে কিনা, কিংবা যিনি লিখেছেন তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, কিংবা কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কোনো লেখা; পর্দার অন্তরালের কোনো গেইমপ্ল্যানের অংশ কিনা সেগুলো যাচাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
অবৈধ ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব সালাউদ্দিন তানভীরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ওইসব অবৈধ কাজেও সারজিস আলম জড়িত, বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদ থেকেও এমন ‘নোংরা অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে বলেও পোস্টে অভিযোগ করা হয়।
সারজিস লিখেছেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকে সবচেয়ে বেশি নোংরা মানসিকতা এবং বিবেকবোধহীন আচরণের পরিচয় দিয়েছেন গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়েও শুধুমাত্র টিআরপি আর ফুটেজের আশায় প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে মনগড়া আর সাপ্লাই পাওয়া তথ্যকে একত্রিত করে তিনি আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমাকে নিয়ে তার ফেসবুকে লেখা অভিযোগুলো তিনি যদি সত্য প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিবো। আর যদি না পারেন, তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। গাট্স থাকলে এই চ্যালেঞ্জটুকু তিনি গ্রহণ করুক।’
এছাড়া পোস্টে সারজিস ফ্রান্সে বসবাসরত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকি ভট্টাচার্যের কথাও তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘পিনাকি দাদাকে আমি শ্রদ্ধা করি। ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ের তিনি একজন অগ্রসৈনিক। কিন্তু তিনি যখন অনুমানের প্রেক্ষিতে আর্মি চিফের সঙ্গে ঘুটু করার কথা বলেন, তখন ব্যথিত হই। বিনয়ের সাথে তাকে বলতে চাই, অভ্যুত্থানের শক্তি আর ফেসগুলোকে আইসোলেটেড করার মাধ্যমে তারুণ্যের সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়ার নানা অপচেষ্টা এখন হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে। সেসব অপচেষ্টার ফাঁদে না পড়ে বরং তারুণ্যকে ঐক্যবদ্ধ করতে আপনার প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যাশা করি। কঠিন সময়ে যেহেতু দুনিয়াদারি এসব লোভের ঊর্ধ্বে থাকতে পেরেছি, আগামীতেও অন্য কোনো ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক ইকুয়েশন স্পর্শ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।’
পোস্টে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘৫ই আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত অবৈধ এক টাকা স্পর্শ করিনি, অনৈতিক কোনো সুপারিশকে প্রশ্রয় দেইনি। এটা আমার কাছে অভ্যুত্থানের রক্তের কমিটমেন্ট। আমার নিজের সাথে নিজের কমিটমেন্ট।’