Image description
ধীরে ধীরে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির ইচ্ছা । শীর্ষে শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবছে না দল । দেশে থাকা কাউকে এখনই মুখপাত্র করা হবে না । কর্মসূচি তৈরিতে নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার ।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । ৫ আগস্টের বিপর্যয়ের ধাক্কায় কিছু সময় স্থবির থাকার পর একপর্যায়ে দলটি কেন্দ্রীয় কিছু কর্মসূচি পালন শুরু করে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে । প্রথম দিকে এতে উপস্থিতি ছিল নিতান্ত হাতে গোনা । তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মিছিলের আকার বাড়ার পাশাপাশি সংখ্যাও বাড়ছে । দলের কয়েকজন নেতা বলেছেন, তাঁদের ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠন’ চলছে এবং কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি হওয়ায় মিছিলগুলোতে অংশগ্রহণ বাড়ছে । দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম এ সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আজকের পত্রিকাকে বলেন,‘ আমরা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ধরেই আগাচ্ছি । আস্তে আস্তে আমাদের আন্দোলনের তীব্রতা বাড়বে । তবে আমরা তো নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না ।

নিরাপত্তার বিষয়টা অগ্রাধিকারে রেখেই আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন করছি । ' আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , ৫ আগস্টের পর বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা - কর্মীদের নেতৃত্বে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল হয়েছে । কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , পর্যায়ক্রমে যুবলীগ , স্বেচ্ছাসেবক লীগ , ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে মিছিল হচ্ছে । একাধিক কর্মী জানিয়েছেন , এসব মিছিলের সমন্বয় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই করছেন ।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল করার খবর পাওয়া গেছে । মিছিলে অংশ নেওয়ায় এর আগের দুদিনেই রাজধানী থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সংগঠনের অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় । ২০ এপ্রিল রাজধানীর একাধিক জায়গাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা । এর আগে ১৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে এবং ১৫ এপ্রিল রামপুরায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহার আনামের নেতৃত্বে মিছিল হয় । ৬ এপ্রিল রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে মিছিল হয় । পরে মুরাদকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ । চট্টগ্রাম মহানগরেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা একাধিক মিছিল করেছেন ।

যুবলীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন,‘ যাঁরা মিছিল করছেন তাঁদের নেত্রী (দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা) নিজেই সংগঠিত করে দেন । মিছিলকারীরা সরাসরি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন । এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে । ' আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত আজকের পত্রিকাকে বলেন,‘ দলের ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নেতৃত্ব আস্তে আস্তে রি-অর্গানাইজড ( পুনর্গঠিত ) হচ্ছে, অনেকখানি গুছিয়ে এসেছে । 

সংগঠন গুছিয়ে আসার কারণে সমন্বয় করা যাচ্ছে । যে কারণে কর্মসূচিতে কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে । আগামী দিনে আরও ভালো হবে ।” নিয়মিত যোগাযোগ করছেন শেখ হাসিনা : আওয়ামী লীগ ও দলটির একাধিক সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন । হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামে গ্রুপ কলেও তিনি কথা বলেন । এসব বৈঠক অনেক সময় দুই- তিন ঘণ্টাব্যাপীও চলে ।

জানা গেছে , শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিটি জেলার নেতা - কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন । নেতা - কর্মীরা বলছেন , আওয়ামী লীগের দেশে থেকে যাওয়া যেসব নেতা - কর্মী মিছিল - মিটিং করতে পারবেন , তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন শেখ হাসিনা । বিভিন্ন মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টাও হচ্ছে । তবে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলেই দাবি । ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন , ‘ যাঁরা ঢাকায় থাকেন , তাঁদের মিছিলে আসার জন্য সর্বোচ্চ রিকশা বা অটোরিকশাভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করি । সব দিনই যে টাকা দিতে পারি, এমন না । 

আবার যাঁরা এসব মিছিলে আসেন , তাঁদের তেমন প্রত্যাশাও থাকে না । দলকে ভালোবেসেই বেশির ভাগ কর্মী মিছিলে আসেন । ” বড় মিছিলের প্রত্যাশা : রাজধানীর অনেক মিছিলেই যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের এক কর্মী আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ আমাদের আরও কিছু বড় কর্মসূচি হবে । মিছিলের আকার বাড়বে । শুরুর দিকে আমাদের মিছিলে লোক থাকত ১৫-২০ জন । এখান তা ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে । ” ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন ,‘ ঢাকায় মিছিল-মিটিং করতে পারবে — এমন অনেক গ্রুপ আছে ।

প্রতি গ্রুপেই শতাধিক নেতা - কর্মী রয়েছেন । আগামী মাসে ঢাকায় হাজারখানেক নেতা - কর্মী নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে । এর মাধ্যমে আমাদের অবস্থান জানান দিতে চাই ।' দায়িত্বে নতুন মুখের পরিকল্পনা নেই: দেশের রাজনীতিতে‘ রিফাইন্ড ( সংশোধিত ) আওয়ামী লীগ ' নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে । এ নিয়ে ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির একাধিক নেতার বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন উঠেছিল । 

বলাবলি হয়েছিল, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ , সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত ভালো ভাবমূর্তির নেতাদের দলের দায়িত্বে বসানো হতে পারে । কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা একে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র বলেই দাবি করেছেন । দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন , কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শেখ হাসিনার হাতেই থাকবে । আর শেখ হাসিনাকে নিচের দিকে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার অনুরোধ করা হলেও তিনি রাজি হননি । দলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের গুঞ্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন,“ শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন । কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য নেতারাও দায়িত্ব পালন করছেন ।'

মহানগর পর্যায়ের একজন নেতা বলেন , টেলিগ্রাম গ্রুপের আলোচনায় শেখ হাসিনার কাছে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের অনুরোধ করা হয়েছিল । জবাবে তিনি বলেছেন, এখন কাউকে দলীয় পদে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দিলে, সে জেলে পচে মরবে’ । নেতা- কর্মীরা এখন লুকিয়ে থাকতে পারছেন, তখন তা-ও পারবেন না । পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন , দেশের ভেতরে যাঁরা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসে দলকে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দেবেন , তাঁরাই হবেন নেতা । নেতা - কর্মীদের সংগঠিত করতে দেশের ভেতরে থাকা নেতাদের মধ্যে কাউকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের মাঝে আলোচনা আছে ।

কিন্তু গ্রেপ্তার , মামলার আশঙ্কায় আপাতত সে পথেও হাঁটছে না দলটি । দলটির দাবি , ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা - কর্মীদের গ্রেপ্তার বাড়ানো হয়েছে । এ বিষয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন , “ দেশে যাঁরা আছেন , তাঁদের মধ্য থেকে কেউ মুখপাত্র হবেন কি না , সংগঠনের কাজ পরিচালনা করবেন কি না — সেই পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি । যখন হবে , তখন দেখা যাবে । এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি । '