
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত-সমালোচিত নায়িকা পরীমণি—অভিনয়ের চেয়ে বেশি আলোচনায় থাকেন ব্যক্তিগত জীবনের নানা কাহিনি নিয়ে। সেই কাহিনি আবার সিনেমার কাহিনির চেয়ে কোনো অংশে কম নাটকীয় নয়! সেহেতু অবধারিতভাবেই পরীমণির জীবন কাহিনিতেও রয়েছে থানা-পুলিশ-আদালতের সংশ্লিষ্টতা। পাল্টাপাল্টি মামলা, গ্রেপ্তার-রিমান্ডের মতো ঘটনা তো আছেই, মাসখানেক কারাভোগের অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার। ২০২১ সালের জুনে বহুল আলোচিত বোটক্লাব কাণ্ডে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমণি। পরের মাসে পরীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পাল্টা মামলা ঠুকে দেন নাসির। একই বছরের আগস্টে মাদক আইনের অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হতে হয় পরীকে। এই তিন মামলার জের ধরে গত চার বছরে নিয়মিত আদালতে যাতায়াত করতে হচ্ছে পরীকে।
এর মধ্যে আবার চলতি মাসে নতুন করে আরও এক মামলার ঝামেলায় জড়িয়েছেন তিনি। মারধরের অভিযোগে গত ২২ এপ্রিল আদালতে পরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারই গৃহকর্মী। এর পরদিন গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে সম্মানহানির অভিযোগে তুলে পাল্টা মামলা করেছেন পরীমণিও। এই দুই মামলা ঘিরে আদালতে পরীমণির আনাগোনা আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
গত ২২ এপ্রিল শোবিজের আরেক পরিচিত মুখ মেহের আফরোজ শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। পারিবারিক কলহের জের ধরে সৎমায়ের দায়ের করা মামলায় এ পরোয়ানা জারি হয়েছে শাওনের বিরুদ্ধে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাওনকে নেওয়া হয়েছিল ডিবি কার্যালয়ে। সেই দফা মামলার জালে না পড়লেও এবার সৎমায়ের মামলার পরোয়ানা জারি হওয়ায় তাকে হাজিরা দিতে হবে আদালতের বারান্দায়!
শুধু পরী বা শাওন নয়—গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাদের মতো আরও অনেক তারকাই নানা ইস্যুতে মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নিত্যদিনই দেখা মিলছে আদালতে। তাদের আগমন ঘিরে আদালতপাড়ায় পরিবেশ যেন আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালতের কর্মচারী কিংবা বিচারপ্রার্থী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ইউটিউবার—কারোই কৌতূহলের কমতি নেই তারকাদের নিয়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে যেসব খ্যাতিমান ব্যক্তিদের; তাদের মধ্যে অন্যতম আসাদুজ্জামান নূর। নব্বইয়ের দশকে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে তার অভিনয় আলোড়ন তোলে। সেই নাটকের গল্পে ফাঁসির রায় হয় বাকের ভাইয়ের। সেই রায় ঠেকানোর দাবিতে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভও হয়েছে। বিরল সেই ঘটনা এখনো স্মরণীয়। দীর্ঘকাল অভিনয় জীবনের বাইরে থেকেও তারকাখ্যাতি খুব একটা কমেনি আসাদুজ্জামান নূরের।
গত ৫ আগস্টের পর নতুন করে আদালতের কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে আসাদুজ্জামান নূরকে। যদিও তারকা কিংবা শিল্পী হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর এবার আদালতে এসেছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যা ও হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলার আসামি হয়ে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার মামলায় আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন গত বছরের ৫ নভেম্বর। আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। মাঝখানে একবার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে সমালোনার মুখে আদালত তা বাতিল করে দেন। আওয়ামী লীগের সরকার গনিষ্ঠ হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনে বেশ দাপুটে ছিলেন তিনি। জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শমী কায়সার যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সেই মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন সঙ্গীতশিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস। গানবাংলা চ্যানেলের মালিক হিসেবে আলোচিত তাপস আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে নানা সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শোবিজের মানুষদের মধ্যে সর্বশেষ আদালতে দেখা গেছে মডেল মেঘনা আলমকে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল তাকে আটক করে ধানমন্ডি থানার প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তারকাদের আদালতের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে মুখোরোচক আলোচনার অনুসঙ্গ হলেও বিষয়টি ভিন্নভাবে বিবেচনার কোনো সুযোগ আইনে নেই বলেই জানালেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আইনের চোখে সবাই সমান। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী কালবেলাকে বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন।