Image description

Ahmad Musaffa ( আহমদ মুসাফ্ফা)


 
 
জামায়াত আসলে এত দ্রুত নির্বাচন চায় না। জামায়াত তার ইন্টারনাল জরিপে দেখতে পাচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে জামায়াতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমছে। নির্বাচন পিছালে জামায়াতের লাভ। তারপরেও কেন জামায়াত দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার মত কাউন্টার প্রোডাক্টিভ অবস্থান নিচ্ছে।
 
কারণ জামায়াত এখনো দুইটা জায়গায় ধরা। বিপ্লবের ৮ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত জামায়াত তার দলীয় নিবন্ধন এবং প্রতীক ফিরত পায় নাই। জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বিতর্কিত ট্রাইবুনালের বিচারে ফাঁসির আসামী হয়ে কারাগারে বন্দি। জামায়াত তাকে মুক্ত করতে পারে নাই। জামায়াত শিবিরের প্রায় ১০-২০ হাজার নেতাকর্মীদের উপরে ফ্যাসিস্ট আমলের মামলা ঝুলে আছে। এত দিন যাওয়ার পরেও সেগুলোর তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। এছাড়া আরো কিছু ইস্যু আছে।
 
এই ইস্যুগুলো জামায়াতের জন্য ক্রুশাল। মান ইজ্জতের ব্যাপার। খেয়াল করুন, বিএনপি তার শীর্ষ নেতাদের মামলা থেকে খারিজ করিয়ে নিয়েছে, জেল থেকে মুক্ত করে ফেলেছে। এমনকি নামকরা সন্ত্রাসীদেরও মুক্ত করে ফেলছে। রাজনীতিতে বিএনপি তার মাসল পাওয়ার খুবই ক্লিয়ারলি প্রদর্শন করছে। এদিকে জামায়াতের নিবন্ধনই নাই, তাদের আগের জেনারেশনের একমাত্র নেতাকেও তারা মুক্ত করতে পারছে না। জনসমর্থন যাই থাকুক, এরকম একটা দুর্বল রাজনৈতিক দলকে মানুষ গুরুত্ব দিবে কেন?
 
এতদিন পর্যন্ত জামায়াত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একধরণের ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে এসেছে। তারা বলেছে, সংস্কারের জন্য তারা কোন সময়সীমা বেঁধে দিতে চায় না, তারা যথোপযুক্ত সময় দিতে চায়। আর ঠিক এই কাজটা করেই জামায়াত ধরা খেয়েছে। তারা বেশি ভদ্রলোকী রাজনীতি করতে গেছে।
 
একটা জিনিস ভালভাবে বুঝা দরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও রাজনীতি করে। তারা রাজনীতির বাইরের কেউ না। এই সরকারকে বিএনপিকে তোয়াজ করে চলতে হয়, বিএনপির দাবি দাওয়া মেনে তাদেরকে ঠান্ডা রাখতে হয়। এই সরকার সবসময় বিএনপির সাথে নেগোসিয়েশন করে চলে। যেহেতু জামায়াত ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে দিসিল, তাই জামায়াতের নেগোসিয়েশন পাওয়ার কমে গেছে। উল্টোটাও ঘটেছে। সরকার জামায়াতকে নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে গেছে।
 
জামায়াত যদি খুব দ্রুত তার গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো আদায় করতে না পারে, ভবিষ্যতে নির্বাচন কাছাকাছি চলে আসলে এই বিষয়গুলো জামায়াতকে প্রচন্ডভাবে ভোগাবে। তখন মাহফুজদের সাথে একটা কম্প্রোমাইজে আসতে হবে, হয়ত অনেক কিছুতে ছাড় দিতে হবে। জামায়াত তার লেজিটিমেইট দাবি আদায় করতে গিয়ে তাদেরকে ছাড় দিবে হবে কেন? নব্য গঠিত ছোট দল এনসিপিকেও কেন তাকে গোনায় ধরতে হবে? এটা জামায়াতের জন্য অস্বস্থিকর।
 
এজন্য জামায়াত এখন দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে। বিএনপি আর জামায়াত মিলে যদি রাস্তায় নামে, নির্বাচন ঠেকানো/পেছানোর সাধ্য এই সরকারের নাই। জামায়াত দেখাইতে চাইতেছে যে এই সরকার যদি দীর্ঘ মেয়াদে থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে জামায়াতের সাথে নেগোসিয়েশনে আসতে হবে। জামায়াতের সমর্থন পাইতে হলে জামায়াতের কিছু দাবি দাওয়াও মানতে হবে। জামায়াত গুড উয়িলের জবাবে গুড উয়িল পায় নাই। তাই তারা এখন টাইট দিতেছে। তারা জানে, মাহফুজের দল এনসিপিকে গোছানোর জন্য আরো সময় দরকার। জামায়াত সিগন্যাল দিতেছে যে, তোমাদের দল গোছাইতে আমরা এনাফ সময় দিব তবে তার আগে আমাদের সাথে একটা ডিলে আসো। না হলে আমরা বিএনপির সাথে ডিলে যাব।
 
এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও এনসিপির সামনে দুইটা পথ খোলা। তারা জামায়াতের সাথে একটা ডিলে যাবে এবং নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিকে একঘরে করে রাখবে। অথবা কোন ডিলে যাবে না এবং বিএনপি জামায়াতের জোটবদ্ধ আন্দোলনের মুখে নিজেরা একঘরে হবে।