Image description
 

সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ।


বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচনটা আসলে অবসম্ভাবী। নির্বাচনটি প্রয়োজন। ২৪-এর যে অভ্যুত্থান তার পরবর্তীতে নির্বাচনটা আসলে প্রাসঙ্গিক কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, "একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে তো আমাদের ফিরতেই হবে, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গেলে। তারপরও সরকারের কাছে মানুষের যে এক্সপেক্টেশন ছিল, সেখান থেকে তো সরকার অনেক দূরে সরে গেছে, মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল সেগুলো তো সরকার পূরণ করতে পারছে না।"


তিনি আরও বলেন, "এ সরকার শুধু সংস্কার সংস্কার নিয়ে পড়ে আছে এবং এ সংস্কারের নামে অলরেডি সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। দেশের যে অবস্থা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছরে তো এমনি এ দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। টাকা পাচার করে ফেলেছে। এই একটা ধ্বংসাত্মক দেশকে উনি সবাইকে নিয়ে মেরামতের যে চেষ্টা ছিল, সেটা উনি করছেন না। উনি কাগজ-কলমে সংস্কার নিয়ে বসে আছেন।"

 


তিনি বলেন, "যেটা আমি আগেই বললাম, যে সেই সংস্কারের উপর থেকে যে ঐক্য, সেই জায়গায় উনি অনেক সৃষ্টি করেছেন। কিছু দলকে উনি ডাকছেন, কিছু দলকে ডাকছেন না। এবং এমনও কিছু ছোট ছোট দলকে উনি এত বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন যাদের বাংলাদেশে কোন অস্তিত্বই নাই। এক ব্যক্তির এক দল। সে ডক্টর ইউনুসের কাছে উনি সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান ব্যক্তি।"

 


মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, "তাদের কথাবার্তা যদি শুনেন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক, ফুয়াদ সাহেব যে ভাষায় কথা বলেন, কাউকে উনি মানছেন না! সেনাপ্রধানকে যে ভাষায় গালিগালাজ করলেন, রাষ্ট্রপতিকে যে ভাষায় গালিগালাজ করলেন। হোক আওয়ামী লীগের দোসর, সে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক একটা পোস্টে আছেন। আপনি কি একজন রাষ্ট্রপতিকে এইভাবে গালিগালাজ করতে পারেন?"


তিনি আরও বলেন, "আপনি তার ভাষা শুনেন, তার গালিগালাজ গুলি শুনেন। একজন রাজনীতিবিদের গালিগালাজ হতে পারে? আপনি দেখেন, এই যে নির্বাচন নির্বাচন, ডক্টর ইউনুস সাহেব বলছে, প্রথমে যদি আপনি অল্প সংস্কার চান, ডিসেম্বর নির্বাচন, বেশি সংস্কার চাইলে জুলাই নির্বাচন। আবার গতকালকে বললেন ডিসেম্বর থেকে জুলাই নির্বাচন। উনি সবসময় একটা ধোঁয়াশায় মধ্যে রাখছেন জাতিকে।"


"নির্বাচন তো হওয়া উচিত একটা সঠিক সময়ের মধ্যে, না হলে তো দেশের পরিস্থিতি ঠিক থাকবে না," বলেন মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ। তিনি বলেন, "নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে অবস্থা করেছিল দেশের, ১৫ বছর নির্বাচন হয় নাই তো। কেন নির্বাচন হয় নাই? একটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছিল না, বিরোধী দলকে কথা বলতে দিত না, মামলা দিয়ে আপনার সবসময় কোর্টের মধ্যে রাখতো।"


তিনি আরও বলেন, "এই বর্তমান সরকারকে আমি সেম দেখছি। ওই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রেজিমে উনি দেশ চালনা করছে। বারবার বলছে যে আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ না। নিষিদ্ধ তো করেন নাই। সাহেব আলীগ নিষিদ্ধ করার তার কোন ইচ্ছা নেই। বিএনপি বলছে, জাতীয় পার্টি বলছে, বামদলগুলি বলতেছে- নিষিদ্ধ কোন সমাধান হতে পারে না।"


তিনি বলেন, "নিষিদ্ধ যদি না হয়, যেই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের পোস্টধারী, অপরাধ করে নাই, সে আওয়ামী লীগের কথা বললে আপনি তাকে মারবেন কেনো? আপনি তাকে ধরবেন কেন? সে কথাও বলতে পারবে না, বের হতেও পারবে না বাড়ি থেকে। এই অবস্থা তো আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল। বিএনপির মহাসচিবের বিরুদ্ধে ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়েছিলো। যেটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে ভালো চোখে দেখে নাই।"


তিনি বলেন, "আপনাকে কি ভালো চোখে দেখবে? আপনি দেখেন, জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান উনি বললেন, যে এই আওয়ামী লীগ সরকারকে জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে একটা নির্বাচন গেলে ইনক্লুসিভ নির্বাচন হবে না।"


মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, "এই সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে মানুষ ভালো নেই, কিছু কথা বলল সরকার পরের দিন দুদক উনার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিলেন। সেম আওয়ামী লীগের মতই পরের দিন দুদক আপনার টেলিভিশনে বিবৃতি দিল জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। পরের দিন আবার জিএম কাদার একটু টেলিভিশনে কথা বললেন, তারপরের দিন উনার এবং উনার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব বন্ধ এবং উনার ছেলে মেয়ে এবং মেয়ের জামাতা।"


তিনি আরও বলেন, "এই ঘটনা তো আমরা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেখেছি। আওয়ামী লীগের পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার এই কাজগুলি করেছে, কেউ কোন বিবৃতি দিয়েছে, পরের দিন সে গ্রেপ্তার হয়ে গেছে, পরের দিন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ মামলা হয়েছে। সাংবাদিকসহ, আজকে দেখেন, সাংবাদিক কি সরকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে?"


"আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের পেপারটা আজকে দেখলাম ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল না। একটা কথা শেখ মুজিব সম্পর্কে লিখতে পারে নাই ১৯৭০ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সাধারণ নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই, তার জন্য মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই কথাটা আপনার পত্রিকা লিখতে সাহস পায় নাই।"


তিনি বলেন, "আমরা কোথায় আছি দাঁড়িয়ে? প্রাপ্তি নিয়েই আমরা থাকতে চাই। প্রাপ্তির পরিমাণও বাড়াতে চাই। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের যে পদক্ষেপ সেটিকে আপনি সন্তোষজনক মনে করেন কিনা? সন্তোষজনক তো ঘটেই না। 


তবে প্রাপ্তি যদি প্রাপ্তির কথা বলেন, ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে যে সরকার হচ্ছে, যেহেতুই সরকার আপনার দেশকে ভালোভাবে চালাইতে পারছে না, ডক্টর ইউনুস সাহেবের উচিত জরুরি ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আবার বসা। বসে জাতীয় ঐক্যের একটা সরকারের দিকে হাঁটা। আদর এ দেশকে সে কন্ট্রোল করতে পারবে না।"


মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, "যেইভাবে আপনার শুরু হয়েছে, লুটতরাজ, দখলবাজি, তারপর মব জাস্টিস, দ্রব্যমূল্যের দাম তো আপনার প্রেক্ষাপটে কাঁচাবাজারের দাম কমেছে, চাউলের দাম কমে নাই তো, আপনাকে বলি কি, ডিমের দাম কমে নাই, তেলের দাম কমে নাই, আপনি কাঁচাবাজার কমে গেছে, তাতে স্বস্তি ফালছেন?"


তিনি আরও বলেন, "এই যে মানুষ বেকার হচ্ছে, বিশাল এই বেকার ছেলেমেয়ে যাবে কোথায়, এরা করবে কি? কিছুদিনের মধ্যে এই চুরি ডাকাতি চিন্তাইতো কন্ট্রোল করা যাবে না। নির্বাচনে দিবেন না, এইভাবে দেশকে চালাবেন, আবার বিএনপিকে দখলবাজি করতে দিবেন, জামাতকে প্রশাসন দখল করতে দিবেন, ছাত্রদেরকে দিয়ে আপনার দেশ পরিচালনা করবেন। এইভাবে তো চলতে পারবে না। জাতীয় পার্টি সহ সকল দলকে নিয়ে একটা ঐক্যমত সরকার এই সরকারকে গঠন করতে হবে, তারপর আপনার দেশ স্থিতিশীল হলে নির্বাচন দিতে হবে।"


শেষে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সেই স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব।