Image description

‘সবার আগে বাংলাদেশ’—এটি হচ্ছে বিএনপির মূলনীতি। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য হচ্ছে আমাদের শক্তি। তাই দেশের স্থিতিশীলতা ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কোনো রকম কর্মকাণ্ডকে আমরা প্রশ্রয় দিতে পারব না। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে হবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে।

রাজনীতিকদের হাতে রাজনীতি থাকবে, এটা যেমন সর্বজন স্বীকৃত; তেমনি রাজনীতিবিদেরা রাজনীতির সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, এ বিষয়ে অনেক আগে আমরা পরিষ্কারভাবে কথা বলেছি যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে। গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে। যদি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনা যায়, আদালত নির্ধারণ করবেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভাগ্য। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, রাজনীতি করতে পারবে কি না, সেটা তখন আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু সরকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও এক পর্যায়ে তাদের মন্ত্রিসভার সভায় (উপদেষ্টা পরিষদের সভায়) সে আইনটা উত্থাপন হলেও তারা সেখান থেকে সরে আসে। তারপর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পুলিশ দিয়ে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদি রাজনৈতিকভাবে দল হিসেবে তাদের বিচার হয় এবং স্বতন্ত্রভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা যায় (অনেককে আনা হয়েছে, আরও আসবে), তাহলে সবকিছু একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে। একটি বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে এ দেশে গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনো দোষ স্বীকার করেনি, ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে, রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে (অনির্বাচিত হলেও নির্ধারিত প্রধানমন্ত্রী) ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তক্রমে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর মাধ্যমে যে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা তো প্রমাণিত সত্য। সেই গণহত্যার বিচার চায় মানুষ। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, তারা কোনো অপরাধ করেনি। উল্টো গণ-অভ্যুত্থানকারীরাই যেন অপরাধী। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি, তারা দায় স্বীকার করেনি, তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না; সেটা বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে।

এখন কথা হচ্ছে, এই পতিত ফ্যাসিস্ট দলকে বিচারের আওতায় না এনে পুনর্বাসনের কথা কেন আলোচনায় স্থান পাচ্ছে? তার মানে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। আমরা চাই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শক্তির রাজনীতি করার কোনো অধিকার আছে কি না, সেটা নির্ধারণ করবে এ দেশের বিচারিকপ্রক্রিয়া এবং জনগণ। সেটাই আমাদের সবার জন্য উত্তম। আমরা যেন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ডে কাউকে সংযুক্ত হতে না দিই, সেদিকে সচেতন থাকি। সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য