Image description
বিদেশি কূটনীতিকদের ইফতারে নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের সংস্কার এজেন্ডা উচ্চাভিলাষী, কিন্তু প্রয়োজনীয়। আমরা দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে ভেঙে ফেলার লক্ষ্য রাখি, যা ইতিপূর্বে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফাঁপা করে দিয়েছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা মৌলিকভাবে পুনর্গঠন করতে চাই, যার মাধ্যমে এটি সত্যিকার অর্থে সব নাগরিককে সেবা দেবে।

সোমবার রাজধানীর বনানীতে বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে এনসিপি আয়োজিত ইফতারে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষক নাহিদ বলেন, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করেছিল। ছাত্র, জেন জেড, নারী, শ্রমিক, নাগরিক—প্রতিটি স্তরের মানুষ তাদের দেশের জন্য জেগে উঠেছিল। ছাত্র এবং জেন জেড এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হাসিনার সরকার হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে বা অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এ নৃশংসতা স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এসব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ন্যায়বিচার জুলাই বিদ্রোহের একটি কেন্দ্রীয় দাবি হিসেবে রয়ে গেছে। এ সাহসী তরুণরা আমাদের দেখিয়েছে যে, যখন নাগরিকরা তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে, তারা চিরকাল চুপ থাকে না। তারা জেগে ওঠে এবং লড়াই করে।

এনসিপি প্রধান বলেন, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি জন্ম নিয়েছে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজন থেকে, যা আমাদের জনগণের দাবি অনুযায়ী ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং সাংবিধানিক রূপান্তর নিশ্চিত করবে। আমাদের রাজনৈতিক রোডম্যাপ তিনটি মূল এজেন্ডার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। ন্যায়বিচার, সংস্কার এবং একটি গণপরিষদ নির্বাচন, যা একই সঙ্গে পরবর্তী সংসদের ভূমিকা পালন করবে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, একটি নতুন সংবিধান ছাড়া আমরা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে পারব না। জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টেও বাংলাদেশের জন্য গভীর কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানান নাহিদ। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি জাতির, প্রতিটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তির এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত।

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে একটি টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান এনসিপির আহ্বায়ক।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এ যাত্রাটি মসৃণ এবং অর্থবহ করতে আপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এনসিপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। আমরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে আমরা সরকারকে ফ্যাসিবাদী শক্তির দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারও দাবি জানাচ্ছি। একই সময়ে আমরা সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী।

আখতার বলেন, জুলাইয়ের গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও সংস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে বাংলাদেশের গভীর সংস্কার প্রয়োজন। জাতিসংঘের মহাসচিব তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

ইফতারে অংশ নেন আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, চীন, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, নেপাল, ডেনমার্ক, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, কসোভো, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জাপান, শ্রীলঙ্কা ও রাশিয়ার কূটনীতিকরা।