
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক জাতীয় নাগরিক পার্টির (দক্ষিণাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর জের ধরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি সংগঠন। এমন প্রেক্ষাপটে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। হাসনাত আবদুল্লাহর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে দলটি বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। বরং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হবে-এমনটা ধরে নিয়ে সতর্ক রয়েছে বিএনপি। তাদের মূল লক্ষ্য দ্রুত সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন। এই ইস্যু দুটির ওপরই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ অনেক কথাই থাকে যা প্রকাশ্যে আনা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হচ্ছে মানুষের একটি আস্থার জায়গা; একে নিয়ে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়ার আগে বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত বলে মনে করেন নেতারা। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ফেসবুকের ওই পোস্টের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আছে কি না-এসব কিছুর পেছনে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো বিষয় জড়িত কি না-তা তারা খতিয়ে দেখছেন। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে, অন্য কোনো দিকে আপাতত নজর দেবে না। নেতারা মনে করছে, নির্বাচন হয়ে গেলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সব কিছু স্বাভাবিক হবে। জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ যদি স্থিতিশীল থাকে, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ সহজ হবে। আর দেশ যদি শান্তিপূর্ণ থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও ভালো, এ দেশের সব মানুষের জন্যই শান্তি। এতোগুলো প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া যে একটা পরিবেশ তা যাতে নষ্ট না হয়। নিজেরা নিজেরা কোনো বিষয় নিয়ে কোনো রকমের বিবাদে জড়িয়ে না পড়ি-এই অনুরোধটা সবার কাছে থাকবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে দাবি করেন, ‘সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে।’ এরপর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়।
বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক জোট ও দল চায় গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুত সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা হোক। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলেই কেবল দেশ সঠিক পথে থাকবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই ধরেই নিয়েছে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে অনেকে বলছে ডিসেম্বর অনেক দেরিতে। কিন্তু তারপরেও ডিসেম্বর ‘কাট অব টাইম’ হিসাবে ধরে নিয়েছে সবাই। সবার ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন।
শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কথা উঠছে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না? কিন্তু এই কথা উঠছে না, যারা গণহত্যা চালালো তাদের বিচার হবে কি না? কারা গণহত্যা চালিয়েছে? এটা কি মানুষ দেখেনি? কোন পুলিশ, কোন ওসি, কোন ডিসি, কোন এসি এখানে ভূমিকা রেখেছে? এই গণ-আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য দমন করা হয়েছিল কার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের কোন নেতাদের নির্দেশে? এগুলোর বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে পারলে আওয়ামী লীগ পুরোনো দল, সেই দলে যারা অপরাধী, অপরাধের বিচার হলে তারপরে জনগণের কাছে গিয়ে, জনগণ যদি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেন সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নেই।’ তিনি আরও বলেন, যদি অপরাধ না করেন, ছাত্রহত্যা না করেন, কোনো অর্থ লোপাট না করেন, টাকা পাচার না করেন-এ রকম লোক যদি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আসেন, তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না। আমার বক্তব্য হচ্ছে এটা।