
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় গত মঙ্গলবার থেকে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। একের পর এক ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতালটিও বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে দেশটি। এর আগেও গত জুনে একবার বোমা হামলায় হাসপাতালটি বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল; কিন্তু এবার পুরো হাসপাতালটিই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাজার ইসলামিক ইউনিভিার্সিটিতেও হামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু করা নতুন হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনই শিশু। এদিকে ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। গত বৃহস্পতিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশটির গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। খবর আল জাজিরা ও টাইমস অব ইসরায়েলের।
গাজায় পবিত্র রমজান মাসেও থেমে নেই ইসরায়েলি বর্বরতা। একের পর এক বোমা হামলায় অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন নারী-শিশুসহ অনেক মানুষ। প্রতিটা ভোর আসছে নতুন আতঙ্ক নিয়ে। শুক্রবারের হামলায় আরও অনেক মানুষ নিহত হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে এদিন বড় হামলা চালিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় গাজার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতালটি। তুরস্কের অর্থায়নে তৈরি এ হাসপাতালটি এর আগেও গত জুনে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছিল। তবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেও সেবার সংস্কার করে পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়; কিন্তু এবার বোমা হামলা চালিয়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে হাসপাতালটি। হাসপাতালটিতে বছরে ১০ হাজার ক্যানসার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশটিতে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে এ বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু সরকার দেশটির গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। বিক্ষোভ কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেরুজালেম ও তেল আবিব থেকে পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আয়োজকরা বলছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচি যেভাবে গতি পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনগুলোয় আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার পর বৃহস্পতিবারের এ বিক্ষোভ আরও বড় আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সরকার রাজনৈতিক কারণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় এখনো হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ৫৯ জনের পরিণতি নিয়ে ভাবছে না।
ধারণা করা হচ্ছে, জিম্মিদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন। ব্রাদার্স ইন আর্মস আন্দোলনের প্রধান নির্বাহী ইতান হার্জেল বলেন, ‘এই সরকার এখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য ইসরায়েলের জনসাধারণকে বিরক্ত করবে—এমন বিষয়গুলো থেকে নজর অন্যদিকে সরানোর জন্য আবারও যুদ্ধ শুরু করেছে। সরকার সম্ভাব্য সব পর্যায়ে সব ধরনের বৈধতা হারিয়েছে। তারা ব্যর্থ হচ্ছে।’ বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ জেরুজালেমের মধ্যাঞ্চলে নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনের কাছের সড়কগুলোয় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা এবং গাজায় এখনো জিম্মি থাকা মানুষের সমর্থনে লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড। অনেকে ড্রাম বাজাচ্ছিলেন এবং স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘এখনই জিম্মি মুক্তির চুক্তি করুন।’
বিক্ষোভের আয়োজকদের একজন ওরা নাকাশ পেলেড। তিনি নৌবাহিনীর সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি হাইফা শহরের নিকটবর্তী একটি এলাকা থেকে বিক্ষোভে যোগ দেন। জেরুজালেমের উপকণ্ঠে তাঁবুর ভেতর অন্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তিনি রাত কাটিয়েছেন। পরে পায়ে হেঁটে শহরটির ভেতর ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে বিক্ষোভ করেন।
নাকাশ পেলেড বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের সংগঠিত হতে হবে, আমাদের অবিচল থাকতে হবে, আমাদের মূল লক্ষ্যে নিবদ্ধ থাকতে হবে। (বিক্ষোভ) সহিংস হওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনি এটিকে ভদ্রোচিতও রাখা যায় না।’ বিক্ষোভকারীরা জোরাল কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ইসরায়েল তুরস্ক নয়, ইসরায়েল ইরান নয়।’ নেতানিয়াহুর নেওয়া বেশ কিছু সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য ‘লাল পতাকা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর একটি হলো, বারকে বরখাস্ত করার ঘটনা। তারা বলেন, নেতানিয়াহু মারাত্মক ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছেন। তিনি কোনোকিছুই মানছেন না। নিজের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে তিনি যা ইচ্ছা তাই করছেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর মেনে নেওয়া যায় না। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তার পদত্যাগ ছাড়া সাধারণ ইসরায়েলিরা রাজপথ ছাড়বেন না বলে বিক্ষোভকারীরা জানান।