Image description

পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচি খুব একটা নেই দলগুলোর। এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় ইফতার আয়োজন নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল ইফতার কর্মসূচিও পালন করতে পারেনি ইচ্ছামতো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট হাজির হয়েছে। ইফতার কর্মসূচিতে সমমনা দলগুলোর নেতাদের পরস্পরের সাক্ষাৎ-আলোচনা হচ্ছে। রমজানের শুরু থেকে রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো   ধারাবাহিকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন   
করে আসছে। কেন্দ্র থেকে সারা দেশে চলছে এই আয়োজন। এবারের রমজানে ব্যতিক্রম হলো গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটসঙ্গী দলগুলো। এসব দল এবার প্রকাশ্যে ইফতার মাহফিল করার মতো অবস্থায় নেই। 

রমজান মাসের শুরু থেকেই ইফতার মাহফিল আয়োজন করে আসছে বিএনপি, জামায়াত, নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে রমজান মাসকে তারা গণসংযোগের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইফতার মাহফিল ঘিরে মাঠে সরব ইসলামী দলগুলো। ইফতার আয়োজন যেন হয়ে উঠছে নেতাদের মিলনমেলা। ওদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচন। যদিও নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি। এরপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখতে চাইছে দলগুলো। এজন্য রমজান মাসেও ইফতার মাহফিলের মধ্যদিয়ে গণসংযোগ করছে নেতারা। রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকায় ইফতার মাহফিলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মহল্লায় ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ইফতার মাহফিলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নানা ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতের মিল এবং অমিলের বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে দল দু’টির নেতাদের বক্তৃতা এবং বিবৃতিতে। এরপরও বিএনপি’র ইফতারে জামায়াতের নেতাদের এবং জামায়াতের ইফতারে বিএনপি’র নেতাদের দেখা যাচ্ছে। একই টেবিলে বসে ইফতার করেন নেতারা। চলে কুশল বিনিময় ও রাজনৈতিক কথোপকথন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে। এসব আয়োজনে নেতারা দিচ্ছেন ঐক্যের ডাক। পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের বার্তাও দেয়া হচ্ছে। 

গত ৩রা মার্চ রমজানে ইফতার মাহফিল আয়োজনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একটি নোটিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, রমজান মাসে দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল স্তর থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী, বাহুল্য পরিত্যাগ করে অনাড়ম্বরপূর্ণভাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান করতে হবে, এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে মসজিদ কিংবা বাজার সংলগ্ন খোলা জায়গায় ইফতার ও দোয়া মাহফিলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে, ব্যানারে শুধুমাত্র ‘ইফতার ও দোয়া মাহফিল’ লেখা থাকবে। ২০ রমজানের মধ্যে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিএনপি: প্রথম রোজায় রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে এতিম-ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে ইফতার করে বিএনপি। এরপরে গত ৬ই মার্চ হোটেল ওয়েস্টিনে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে ইফতার করে বিএনপি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং মানবতা সমুন্নত রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্য কেবল তার জনগণই নির্ধারণ করবে। সামনের পথ স্পষ্ট, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে দ্রুত প্রত্যাবর্তন।

ওদিকে গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে রাজনীতিবিদদের নিয়ে ইফতার করে বিএনপি। আগামীকাল পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবে দলটি। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা মহানগরের বিএনপি বা দলের অঙ্গ-সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সারা দেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং থানায়ও ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচি থেকে বিএনপি’র রাজনীতি জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তাও দিচ্ছে দলটি। 

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মানবজমিনকে বলেন, দলকে সংগঠিত করা, দাবি, সজাগ থাকা এবং গণতন্ত্রের প্রতি যাতে নিবেদিত হয়, এই বার্তাগুলো ইফতার মাহফিলে নেতাকর্মীদের দেয়া হচ্ছে।

জামায়াত: দীর্ঘ এক দশক পর গত ৯ই মার্চ গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের নিয়ে ইফতার করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরপর ১৫ই মার্চ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক, ডাক্তার, সাংবাদিক, গবেষক, ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিকে নিয়ে ইফতার করে জামায়াত। এ ছাড়া দলটি প্রতিদিনই ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে। এসব কর্মসূচিতে দলটি নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছে। বলছে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপরে জাতীয় নির্বাচন করা উচিত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষ করে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা বসে আলোচনার মধ্যদিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলেও মনে করছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর  ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের মানবজমিনকে বলেন, রমজানের শিক্ষা, গুরুত্ব, শবে বরাত সম্পর্কে এবং সম-সাময়িক ইস্যুতে আমাদের কথা জনগণকে জানানো হচ্ছে।

ওদিকে গত ১১ই মার্চ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক, ছাত্র-শ্রমিক, ওলামায়ে কেরাম এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে ইফতার মাহফিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। এতে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। এছাড়া এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে। মূলত তার কথা, কিছু উদ্দেশ্যে এসব ইফতার মাহফিলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলগুলো। এর মধ্যদিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙা  ও সমবেত করা এবং সাধারণ মানুষ যারা ইফতারে আসবেন তাদেরকে নির্বাচনের বার্তা দেয়া।