Image description

সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা কওমি মাদরাসাগুলোকে মূলধারায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন রূপকল্প ২০২৫-২০৩৫ নামে একটি কর্মসূচির খসড়ায় হাত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এই কর্মসূচির আওতায় বিদ্যমান ছয়টি বোর্ডকে এক করে একটি সরকারি বোর্ডের মাধ্যমে সনদ দেওয়া ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য সরকারি বেতন-ভাতা প্রদানেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে এখনো মাস্টার্স ডিগ্রির মর্যাদা পান না। কওমি মাদরসার প্রকৃত সংখ্যা কত আর শিক্ষার্থী সংখ্যা কত, সে হিসাবও কারো কাছে নেই। কারণ দেশের গ্রামেগঞ্জে যেসব কওমি মাদরাসা গড়ে উঠেছে, সেগুলো মূলত নুরানি মক্তব, বেশি হলে হিফজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বড় বড় মাদরাসার সাধারণত কিতাব বিভাগ রয়েছে। এই কিতাব বিভাগের শেষ শ্রেণি হচ্ছে দাওরায়ে হাদিস। তবে কেউ কেউ বলে থাকেন, দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে। এসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০ লাখ হতে পারে।

কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন রূপকল্পে এসব মাদরাসাকে মূলধারায় আনতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সব কওমি মাদরাসার হালনাগাদ তথ্যসহ ডাটাবেস প্রণয়ন; প্রতিষ্ঠানের জমি, অবকাঠামো, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক ডাটাবেস প্রণয়ন; প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রী বিষয়ে পৃথক পৃথক তথ্যপঞ্জি প্রণয়ন এবং হালনাগাদকরণ; প্রাতিষ্ঠানিক কোড, ইআইআইএন নম্বর ইত্যাদি প্রদান। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদরাসার অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, কওমি মাদরাসার উন্নয়ন রূপকল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি। দশ বছরমেয়াদি একটি কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

আমরা কওমি মাদরাসার উন্নয়ন চাই, শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন চাই। সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলে আমরা এ ব্যাপারে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া চূড়ান্ত করব।’ কওমি মাদরাসার জন্য চারটি গ্রেড বা শ্রেণি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

গ্রেড-১ : বর্তমানে পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যমান এবং গত ২৫ বছর বা তার বেশি পূর্বে স্থাপিত হয়ে ধারাবাহিকভাবে চলমান কওমি মাদরাসা।  গ্রেড-২ : বর্তমানে তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যমান এবং ১৫ বছর বা তার বেশি পূর্বে স্থাপিত হয়ে ধারাবাহিকভাবে চলমান কওমি মাদরাসা।  গ্রেড-৩ : বর্তমানে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যমান এবং পাঁচ বছর বা তার বেশি আগে স্থাপিত হতে ধারাবাহিকভাবে চলমান কওমি মাদরাসা। গ্রেড-৪ : অন্য সব মাদরাসা বা নতুন চলমান কওমি মাদরাসা।

কওমি মাদরাসাগুলোর জন্য সরকারিভাবে গ্রেডভিত্তিক মাসিক সম্মানি চালুকরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গ্রেড-১ ভুক্ত কওমি মাদরাসার প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য শিক্ষক চারজন ও কর্মচারি একজনের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি সাত হাজার টাকা সম্মানির প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রেড-২ ভুক্ত কওমি মাদরাসার প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য প্রতি মাসে আট হাজার টাকা এবং অন্যান্য শিক্ষক চারজন ও কর্মচারী একজনের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা সম্মানির প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রেড-৩ ভুক্ত কওমি মাদরাসার প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং অন্যান্য শিক্ষক চারজন ও কর্মচারী একজনের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি তিন হাজার টাকা সম্মানির প্রস্তাব করা হয়েছে।

রূপকল্পে কওমি মাদরাসার একাডেমিক ডিগ্রি (সনদ) প্রদানের জন্য বিদ্যমান ছয়টি বোর্ডের বদলে একটি সরকারি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ জন্য কওমি মাদরাসার সমন্বিত বোর্ডের অর্গানোগ্রাম চূড়ান্তকরণ, নিয়োগ ও কার্যকর করা; কওমি মাদরাসা বোর্ডের অবকাঠামো নির্মাণ ও চালু করা; কওমি মাদরাসার বোর্ড কর্তৃক প্রদানযোগ্য সনদ এবং সমমান নির্ধারণ ও কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কওমি মাদরাসার জন্য কারিকুলাম, সিলেবাস-পাঠ্যক্রম ইত্যাদি পুনর্নির্ধারণ; ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করা; শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল বা টিফিন চালু করা; কওমি মাদরাসার প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নয়ন; কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও চালু করা; কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।