Image description

জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুনরায় তদন্ত করে চিহ্নিত এসব হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

সোমবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা এই দাবি জানান। এছাড়া হামলায় অভিযুক্তদের তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় সংগঠক মোসাদ্দেক আলী বলেন, হামলাকারীর যেসব স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে অন্তত চিহ্নিতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তালিকাও করেছেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাখ্যা। আওয়ামী লীগের যে হামলা-মামলায় জড়িত না থাকার বয়ান, এই প্রতিবেদন সেটিকে শক্তিশালী করছে। এখন পুনরায় যদি তালিকা করা হয় এবং সেখানে যদি ছাত্রলীগের অনেকে গিয়ে আশ্রয় পায়, তাহলে তারা বলার সুযোগ পাবে- তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে যারা আছে, তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজন আছে। শুধু এখানের অসততা নয়, এখানে অসংগতি, অনৈতিকতাসহ অন্যান্য কোনো বিষয় জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ভুল শিকার করে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের তালিকা দেবেন।

শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তারা হামলার মদদ দিয়েছেন। ১৭ জুলাই ছাত্রলীগের অনেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষকের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষকদের দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। যে হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়, সেও তো অপরাধী।  

১৫ জুলাই হামলার শিকার ও বর্তমান নাগরিক কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হামজা মাহবুব বলেন, এই তালিকায় আমরা ক্ষুব্ধ। অনেক চিহ্নিত হামলাকারীর নাম আসেনি। এই ঘটনা পুনরায় তদন্ত করে চিহ্নিত হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ বলেন, ছাত্রলীগের চিহ্নিত মাথাগুলোকে বাদ দিয়ে ১৯-২০, ২০-২১, ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়ে তালিকা খুব কষ্ট করে ১২৮ জনের তালিকা করেছে তদন্ত কমিটি। সৈকত, আবু ইউনুস, আকিব ফুয়াদ, কামাল উদ্দিন রানাসহ ছাত্রলীগের বড় বড় সন্ত্রাসীদের নাম নেই। ছাত্রলীগের একজন নারীরও নাম নেই। বিজ্ঞানের তিন হল থেকে মাত্র একজনের নাম এসেছে। অথচ শহীদুল্লাহ্ হল রণক্ষেত্র বানিয়েছে কারা?

তিনি প্রশ্ন করেন, তদন্ত কমিটিতে কারা কারা ছিলেন? কোন লোভে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন করার সাহস পেলেন?

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও আহ্বায়ক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ১৩ মার্চ উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে কেবল সরাসরি হামলায় জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, এমন হামলাকারীদের নাম দেওয়া হয়েছে।  

জুলাই অভ্যুত্থানে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে যে সহিংসতা হয়েছে, তারা ২৫ ভাগের মতো এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এটি নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে কাজী মাহফুজুল হক বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা যেন সেসব তথ্যপ্রমাণ আমাদের পাঠায় সেজন্য আমরা একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা দিয়েছি। এর মাধ্যমে প্রচুর অভিযোগ, ভিডিও ও ছবি আমাদের কাছে এসেছে। তারপর আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা শুনেছি। আমরা নিজেরাও বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। এরপর আমরা দেশি-বিদেশি ইলেক্ট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট ভেরিফাই করেছি। এই রিপোর্টে আমরা এমন কারও নাম আনিনি, যাদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। একদম শক্ত তথ্যপ্রমাণ যাদের বিরুদ্ধে আছে, তারাই প্রতিবেদনে আছেন।

প্রক্রিয়ার বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী বলেন, আমরা শুরুতে অভিযোগ চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্সটিটিউশনাল মেইলসহ বিভিন্ন জায়গায় এটি প্রেরণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, তাদের কাছে কী কী প্রমাণ আছে, সে নথিগুলো আমাদেরকে পাঠাতে। লিখিতভাবে, ই-মেইলে, সরাসরি বা ভিডিওকলে অর্থাৎ যতভাবে আমাদের কাছে পৌঁছানো যায়, সে ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। অনেকেই নিরাপত্তার কারণে হয়তো আসতে পারবে না, তাদের জন্য আমরা ব্যবস্থা রেখেছি।

তিনি বলেন, বিশেষ করে অন্যায় করতে গেছে এমন সময়ের ছবি ও মোবাইল ভিডিও সবগুলো আমরা পেয়েছি। যারা সরাসরি আঘাত করেছে, মোটরসাইকেলে করে এসে আক্রমণ করতে গেছে বা আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে বা অস্ত্র হাতে গুলি করেছে। আমরা গুলির খোসাসহ ছবি প্রতিবেদনে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, ১৩ মার্চ সত্যানুসন্ধান কমিটি উপাচার্য বরাবর প্রায় সাড়ে ৫০০ পৃষ্ঠার একটি সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের সঙ্গে তারা একটি সফট কপিও বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে।