
পশ্চিমেও যারা সমরশাস্ত্র (Warfare) নিয়ে একাডেমিক পড়াশুনা করে, তাদেরকে দেখবেন খালিদ বিন ওয়ালিদের ক্যারিয়ার, মুহাম্মাদ আল ফাতিহের কন্সট্যান্টিনোপোল বিজয় ইত্যাদি নিয়ে গভীর গবেষণা করতে, নতুন নতুন তত্ত্ব-এনালাইসিস উৎপাদন করতে। মুহাম্মাদ সা. যে সমরনায়ক ছিলেন তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা পাবেন। জ্ঞান ও জ্ঞানচর্চায় সম্মান জানাতে তাদের কোন কার্পণ্য আপনি সচরাচর দেখবেন না।
কিন্তু বদর যুদ্ধের আলোচনা আপনি খুব সহজে পাবেন না ওদের ডিস্কোর্সে। ফাতিহের মাটির উপর দিয়ে জাহাজ টেনে নিয়ে যাওয়া নিয়ে শত শত ডকুমেন্টারি কিন্তু বদরের ঘটনা পরিক্রমা কিংবা সাধারণ সৈন্যবিন্যাস নিয়েও খুব একটা কাজ হয়না।
এর কারণ কি?
কারণ হলো রূহানিয়াত মেনে নেওয়াতে ওদের আপত্তি। ফাতিহ সালাত আদায় করে যুদ্ধে নামসেন সেটা ওরা স্বীকার করবে ঠিকই। তাকে ধর্মভীরু, সুফী প্রিন্স বলতেও ওদের সমস্যা নেই। কারণ, খুব সহজে ইসলাম ও মোটাদাগে ধর্মকে কিছু উৎসব-রিচুয়ালে রিডিউস করে দেওয়া যায় - বরং, এটাই এখন নর্মাল। ওরা ধর্মকে ধর্মের জায়গায় দেখতে পছন্দ করে - এর বাইরে যে ধর্মের সেনসেশনাল একটা ব্যাপার আছে সেটা বিশ্বাসের গন্ডিতে রাখতে চায় না। করতে গেলেই তাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাসব্যাবস্থা ধ্বসে পড়বে, তারা অনাথের মত জীবনের অর্থহীনতায় ভুগতে থাকবে। এটা তারা কখনোই হতে দিতে দিবে না।
বদর একটা অতিপ্রাকৃত ঘটনা - আমাদের হিউম্যান পার্স্পেক্টিভ থেকে। ৩১৩ জন ধর্মপ্রাণ যোদ্ধা ১০০০ সশস্ত্র লোককে ডিফীট দিয়ে দিসে এটা প্রথমত মানতে সবারই কষ্ট হবে। যদিওবা আমাদের হিস্টরিকাল একাউন্ট স্ট্রং এবং ইতিহাসের জায়গা থেকেও আমাদের রাবীদের সিলসিলা পশ্চিমা একাডেমিয়াতেও জাস্টিফাইড। তারপরও তারা এই একাউন্ট এভয়েড করতে চাইবে।
সীরাহ পড়লে দেখা যায় খুব স্বাভাবিকতার সাথে বদরের মাঠে মালাঈকা বা ফেরেশতাদের কথা বলা আছে। রূহানিয়াতে ঘাটতি থাকা লোক কোনকালেই এই জিনিস মানতে চাইবেনা, সেটা সরাসরি নূর দেখলেও না। এই কারণেই ৩১৩ তারা বুঝেও বুঝতে চাইবে না।
৩১৩ একটা ম্যাটেরিয়াল উসিলামাত্র। আমাদের কাছেও, এট লীস্ট এই পয়েন্টে এসে ৩১৩ কে উচিয়ে ধরার কোন যৌক্তিকতা নেই। আমাদের প্রমাণ করার কিছুই নেই। আমরা বদর জিতেছি, উহুদ হেরেছি। এই হার-জিত আমাদের মুসলমানিত্বের অংশ। বদর জিতায় আমাদের কৃতিত্ব নেই, উহুদ হারাতেও আমাদের লজ্জার কিছু নেই। এজন্যই সব পরীক্ষা পার করবেন জেনেও আমার রাসূল সা. রাত জেগে জেগে তাহাজ্জুদ পড়তেন আর বলতেন - "আমি কি আমার রব্বের শোকরিয়া আদায় করবো না?"
৩১৩ একটা সংখ্যা। আমাদের ৩১৩ এর ভেতরকার রূহটাকে তাজা করতে হবে। ৩১৩ এর ভেতর যে আল্লাহ ছিলেন সেটার সমঝ বেশি করে নিতে হবে। প্রাউডলি বলতে পারতে হবে, আমার আল্লাহ ছিলেন তাই আমরা জিতেছি। ৩১৩ এর আলাদা কোন গৌরব নেই।
বদর বার্ষিকীতে এই ট্রফি তুলে ধরার সময় এসেছে - ঈমান নামক ট্রফি। ঈমানের নূর থাকাই সবচেয়ে বড় ডব্লিউ আমাদের জন্য, যেটা অন্য কারো নেই। জিহাদ ময়দানের হোক বা মনের, আমরা সবসময় আমাদের প্রতিপক্ষ থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকবোই - এই ইয়াক্বীন নিয়ে ডিফীটিস্ট মনোভাব ছুড়ে ফেলতে হবে। মুমিনের হতাশ হবার কিছুই নেই, সামনে শুধুই ইসলামিক, আলহামদুলিল্লাহ বলার উপলক্ষ।