
সিপিবিসহ কিছু বাম সংগঠনের সহযোগিতায় ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল গণহত্যাকারী হাসিনা। তারাই হাসিনাকে চরম স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হতে গুরুতরভাবে ভূমিকা রাখে। ফলে একটানা দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয় খুনি হাসিনা। গুমখুন, লুটপাট, দুর্নীতি ও আয়না ঘর দিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলে মানুষের জীবনকে।
যেসব দল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহায়ক ছিল তাদেরকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করতে হবে এমনটাই দাবি জুলাই বিপ্লবীদের। ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহযোগী হিসাবে অনুতপ্ত না হলে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই বলে মনে করেন ছাত্র-জনতা।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর জনরোষ থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে দলটির অধিকাংশ শীর্ষ নেতা। গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন বেশ কিছু নেতা। এরই মধ্যে দিল্লির ইন্ধনে একাধিকবার নানা রূপ ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পতিত স্বৈরাচার।
এমন এক প্রেক্ষাপটে সিপিবি হয়ে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ছোবল মারার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা।
জাতিসংঘের মহাসচিব যখন ঢাকায় তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ধর্ষণের বিচারসহ সাত দাবিতে আজ গণমিছিলের ডাক দিয়েছিল বামপন্থি কয়েকটি সংগঠন। আজ শনিবার বেলা ১১টায় তারা দাবিগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তবে ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘিরে ‘উত্তেজনা’ তৈরি হলে তারা গণমিছিল স্থগিত করেন। তবে সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের লাকি আক্তারকে দেখা যায়নি।
এর আগে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে কর্মসূচির কথা জানিয়ে যুক্ত হবার আহ্বান জানান লাকী আক্তার। এতে বিভিন্ন মহলকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়। গণমিছিলটি শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল।
শুক্রবার দেওয়া এই কর্মসূচির ‘পাল্টা’ হিসেবে ঢাকার পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দেন লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি আওয়ামী লীগকে সিপিবি ‘পুনর্বাসন’ করছে অভিযোগ করে সিপিবি অফিস ঘেরাও করার ঘোষণা দেন।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা বাড়তি পুলিশ, সংবাদকর্মী আর সিপিবির কিছু নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি। সেনা সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে।
কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সিপিবি ‘পুনর্বাসন’ করছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তি ভবনের সামনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স তিনি বলেন, ‘যারা ইতিহাস জানে না, তারা কী বলল না বলল, এটাতে দোষ দিতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ক্ষমতার পরিবর্তন চান, কিন্তু ব্যবস্থার পরিবর্তন চান না। তারা তাদের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে চায়। একমাত্র বামপন্থী এবং কমিউনিস্টরা জনগণের মুক্তির জন্য কথা বলে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনটি আমরা গতকালই (শুক্রবার) শোক দিবস ঘোষণা করেছিলাম। মাগুরার শিশুটির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশ শোকে পাথর হয়ে গেছে। তার প্রতিবাদে আমাদের পার্টি অফিসে কালো পতাকা উত্তোলন করেছি। সারা দেশেও উত্তোলন করা হয়েছে। বিকেলে আমরা শোক মিছিল করব।’
গণমিছিলের উদ্যোগ নেওয়া দলগুলো ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে ইনু-মেননসহ বামপন্থি শীর্ষ নেতারা ছাত্রদের ওপর গুলি করতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে। ১৪ দলের বৈঠকে তাদের সিদ্ধান্তের আলোকে ছাত্রজনতার ওপর বাহিনীগুলো গুলি চালিয়েছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে ইনু-মেননরা বিচারের মুখোমুখিও। অথচ তাদের দলগুলো বাইরে প্রকাশ্য রাজনীতি করছে। এটা গণঅভ্যুত্থানের শহিদ আহতদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। বিচারের আগ পর্যন্ত এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। এদের নিষিদ্ধ করতে হবে- এমন দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।