
জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত।আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর বাবাকে নিয়ে স্মৃতচিারণ করতে গিয়ে এক ইন্টারভিউয়ে বলেন,আমার মনে পড়ে না যে আমি খুব প্রয়োজন না পড়লে আমি সরকারি গাড়িতে উঠেছি,ভার্সিটিতে যেতাম পাবলিক বাসে।”
মাবরুর বলেন,"শুধু বাবা না, আমি বলব যে আমাদের পুরো পরিবারকেই যদি কেউ দেখে যারা আমাদের আগে চিনতেন, আমার মনে হয় না যে আমাদের পরিবারের আমার আব্বা, আম্মা, আমার অন্য আদার্স, বা আমরা যারা আছি, আমাদের কারো কোন পরিবর্তন এসছে। এটা বোধহয় কেউ বলতে পারবে না।আমরা যেরকম ভাবে জীবনযাপন করতাম ,আমরা যেভাবে পারিবারিকভাবে যেভাবে চলাফেরা করতাম, এখনো তাই চলি, আগেও তাই চলতাম,বাবার মন্ত্রিত্বের অবস্থায়ও তাই চলেছি।"
তিনি বলেন, তার পরিবার সবসময় সাধারণ জীবনযাপন করেছে, এবং রাজনৈতিক অবস্থান বা সামাজিক মর্যাদা কখনো তাদের চলাফেরায় পরিবর্তন আনে নি।
তিনি আরও বলেন, "আমার এটা আমি যদি উদাহরণ হিসেবে বলি, আমার বাবা যখন মন্ত্রী, আমরা যখন মিন্টু রোডে বাসায় থাকতাম, আমি কিন্তু তখনও আমার ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গিয়েছি এবং এখনো তাই যাই।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তাদের জীবনযাত্রার মধ্যে কোনো পরিবর্তন ছিল না, এমনকি তার বাবার মন্ত্রীত্বের সময়েও তারা সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন।
"আমার প্রথম জীবনের চাকরি আমি করে শুরু করেছিলাম দৈনিক পত্রিকায়, সেটাও আমি করেছিলাম যখন আব্বা আমার মন্ত্রী ছিলেন তখন। তো একদমই সকালবেলা ভোরে উঠে আমার শিফট ছিল, সেই শিফটে আমি চলে যেতাম সাব এডিটর হিসেবে কাজ করতাম। তো সেভাবে আমি আমার মত করে রিক্সায় যেতাম, ওইখানে ওইটা শেষ করে তারপর আমি ক্লাসে যেতাম, ক্লাস করে তারপর আমি আমার আবার বাসায় ফিরতাম। তো এভাবেই তো আলাদা করে ধরেন আমাদের কারো জীবনেই যেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ঠিক আমার বাবার মধ্যেও তাই।"
তিনি আরও বললেন, যে তার বাবার জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং সব কিছু আগের মতোই ছিল।"আমার বাবার খাদ্যাভ্যাস বলেন, চলাফেরা বলেন, জীবনযাপন বলেন সবই আমরা আগের মতোই ছিল। আমার মনে পড়ে যে, আপনারা এটা নিশ্চয়ই জানেন, আমি অনেক পত্রিকা পড়ি আর কি। অনেক মন্ত্রীদের তাদের মেয়াদ ফুরবার পরে সরকারি বাসা ছাড়ার ব্যাপারে তারা অনেকে ডিলে করেন, অনেকে গড়িমসি করেন। আমরা কিন্তু আমাদের আব্বা শুরুতেই বলেছিলেন যে, আমাদের মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে। আমরা তার অনেক আগে আমরা বাসা ছেড়ে চলে যাব এবং আমরা ওই বাসা ছেড়ে একটা ভাড়া বাসায় উঠেছিলাম। সো আমাদের আগেও যে জীবন ছিল, আমরা একটা ভাড়া বাসা থেকে আমরা সরকারি মন্ত্রী যে দায়িত্ব সেটা আমার আব্বা পেয়েছিলেন। পরেও আমরা আবার সেই জায়গায় ফিরে এসেছি।"
তিনি আরও বলেন, তার বাবা সবসময় ন্যায়ের পথে চলার জন্য তাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দিতেন, যেন কোনোভাবে অবৈধ বা অন্যায়ের সুবিধা না নেয়া হয়।
"যেটা উনি নিজে করতেন এবং আমাদেরকেও যেটা উনি বলেছিলেন, সেটা হচ্ছে যে উনি কাজগুলোকে ভাগ করতেন। পারিবারিক কাজ বা ব্যক্তিগত কাজ, সাংগঠনিক কাজ, সরকারি কাজ- এই কাজগুলোর ক্ষেত্রে উনি চেষ্টা করতেন যে কোন একটা কাজে যেন অন্য জিনিস, অন্য সেক্টরের যেন কোন সুবিধা উনি না নেন।"
এটি স্পষ্ট করে যে, তার বাবা সবসময় সৎ পথে চলার জন্য আদর্শ প্রদান করেছেন এবং সরকারি কাজের মাধ্যমে কোনো ধরনের সুবিধা গ্রহণ করতে চাননি।
"উনি যখন প্রোগ্রাম করতেন, ধরেন উনি ঢাকার বাইরে যদি যাইতেন, উনি সেটা আমাদের ওই আব্বার একটা বই আমরা কয়দিন আগে মোড়ক উন্মোচন করলাম,ওখানেও জামাতের আমির সাহেব স্মৃতিচারণ করলেন সেটা হচ্ছে যে উনি সরকারি প্রোগ্রাম গুলোতে সরকারের যে ব্যবস্থাপনা তার আন্ডারে থাকতেন। কিন্তু ওইটা তো প্রথম হাফে উনি শেষ করতেন, দুপুরের মধ্যে শেষ করতেন। দুপুরের পরে উনি সাংগঠনিক যে কাজগুলো করতেন, সেখানে উনি সরকারি কোন প্রোটোকল বা সরকারের কোন লোক তার সাথে যাক, এটা উনি চাইতেন না। উনি উনার খাবার-বাবার চলাফেরা সবই তখন সংগঠনের মাধ্যমে করতেন।"
তিনি বলেন, তার বাবা সবসময় সরকারের প্রটোকল ছাড়াই সংগঠনের কাজগুলো করতেন এবং এটাই তার আদর্শ ছিল।"ঠিক আমাদেরকে উনি একই মানসিকতাই বলেছেন যে, তোমাদের বাসাবাড়িতে তোমরা যে ব্যক্তিগত কাজ করবা এগুলোতে তোমরা কখনো এই ধরনের মানে ফ্যাসিলিটিস গুলো তোমরা ব্যবহার করবা না। নিজের কাজ নিজেরা করবা, নিজেরা যেভাবে চলতা সেভাবেই চলবা। এগুলো উনি বলতেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো ওভাবে পছন্দ করতাম না, আর কি আমি আমার মনে পড়ে না যে আমি খুব প্রয়োজন না পড়লে আমি সরকারি গাড়িতে উঠেছি। এটা যে একদম নিষিদ্ধ বা অবৈধ তা তো না, এটা তো আমাদের জন্য বরাদ্দই ছিল কিন্তু আমরা ওইভাবে ইউজ টু না আর কি।"
এটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন যে, তার পরিবার কখনোই সরকারি সুবিধা গ্রহণে অতিরিক্ত আগ্রহী ছিল না এবং তারা নিজেদের জন্য সবকিছু নিজেরাই সংগ্রহ করতেন।"আমার আম্মা তখন যদি কিছু জায়গায় যেতেন, তাহলে বাসায় যে গাড়িটা, যেমন আমার নানী বাড়িতে যদি যেতেন, তাহলে হয়তো ওই গাড়িটা তিনি মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন। বাকি সময় বাসায় থাকতো, এরকম আমার বাবাকে কখনোই মানে ধরেন আমরা যদি কোন কলেজ ইউনিভার্সিটিতে যাব বা ব্যক্তিগত কোন কাজের জন্য যদি আমরা যাওয়া, এই জিনিসগুলোতে উনি কখনোই আমাদেরকে ডিসকারেজ করতেন যাতে আমরা সরকারি গাড়ি বা কোন কিছু ব্যবহার না করি।
আমরা আমাদের মত করে যেভাবে আগেও উনি, সেভাবে আমাদেরকে একটা পকেট মানি দিতেন এবং সেই পকেট মানির ক্রাইসিসটা শুরু হলো বলেই কিন্তু আমি শেষের দিকে এসে পাঁচ সাল থেকে আমি চাকরিতে চলে গেলাম। যে আমার তো আসলে খুচরা ইনকাম কিছু করা দরকার, আদারওয়াইজ আমি এই যে ভার্সিটিতে যাই বা এগুলো, আমরা কিভাবে কি এফোর্ড করব। তখন উনি আমাকে বললেন যে ঠিক আছে তুমি তাইলে কাজ করো, এরকম একটা অনুমতি উনি দিলেন, তখন থেকে হচ্ছে আমি কাজ করি।"
তিনি বলেন, তার বাবার দিকনির্দেশনা এবং প্রেরণা তাকে তার কর্মজীবন শুরু করতে উৎসাহিত করেছে।"আর এমনিতেই আমরা যখন আমার আব্বা শপথ নিয়ে বাসায় ঢুকলেন, গণভবন থেকে প্রথম, সেইদিন উনি কিন্তু কিছু দিক নির্দেশনা আমাদেরকে তিনি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটা হচ্ছে যে, তোমরা পরিবার, তোমরা সচিবালয়ের আশপাশে তোমরা কম যাতায়াত করবা। এটা উনি বলেছিলেন। দুই নাম্বার উনি বলেছিলেন যে, তোমরা এমন কোন কাজ করবা না যার কারণে আমার কোন দুর্নাম হয়। যদি সেই প্রশ্ন আসে আমি কিন্তু মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো। মানে আমাদের কারণে যেন তার কোন দুর্নাম না হয় বা দলের যেন কোন ইমেজ সংকট না হয়। এটা তিনি আমাদেরকে একদম প্রথম দিন তিনি আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারপরে আমাদের চলাফেরার ভেতরে যেন দাম্ভিকতা, দম্ভ, অহংকার এগুলো না আসে, এগুলো একদম শুরুতে উনি আমাদেরকে প্রথম দিন বলেছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, তার বাবা তাদেরকে সবসময় সতর্ক করেছেন যাতে তারা কখনো অহংকার বা দাম্ভিকতার শিকার না হয় এবং কখনো দলের দুর্নাম না হয়।
"আমরা প্রায় প্রথম ছয় মাস সরকারি কোন বাসা পাইনি। ফলে আমরা মগবাজারে যে ভাড়া বাসায় থাকতাম, ওখানেই আমরা ছিলাম, ওখানেই আমাদের যারা পুলিশ হাউস প্রটেকশনের জন্য যারা এসেছিলেন, তাদেরও খুব বিব্রতকর একটা অবস্থায় পড়েছিলেন। কারণ তাদেরও সেখানে থাকার মতো কোন ব্যবস্থা নেই, সব মিলিয়ে একটা অবস্থা যাই হোক সেভাবে আমরা প্রথম কয়েক মাস তো পার করলাম।"
তিনি বলেন, সরকারি বাসা না পাওয়ার পরও তারা মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন, যেখানে তারা একেবারে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেছেন।
https://tinyurl.com/mwfzv49r