Image description
বামে জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর ও ডানে সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ সোহান

পারিবারিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নেতার নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী। গত ৪ মার্চ সাদুল্লাপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী উপজেলার খোদা বকস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুর রহমান সরকার গত ৯ মার্চ সাদুল্লাপুর থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মামলায় আসামিরা হলেন- ১নং আসামি খুশি সরকার, ২নং আসামি মজিদুল হক, ৩নং আসামি সাদা, ৪নং আসামি শিবলু সরকার, ৫নং আসামি শিমুল সরকার, ৬নং আসামি লিথেন সরকার, ৭নং আসামি সোহান ও অন্তরের বাবা শাজাহান সরকার, ৮নং আসামি সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ সোহান (সোহান সরকার) এবং ৯নং আসামি গাইবান্ধা জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর সরকার।

আজ শনিবার (১৫ মার্চ) সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, এ মামলায় ৪ জন আসামি কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

খোদা বকস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুর রহমান সরকার বলেন, ছাত্রদলের প্রভাব দেখিয়ে পারিবারিক একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের তুলে নিয়ে মারধর করেছে। আমার মাথায় মোট ১৩টি সেলাই দিয়েছে। পাশাপাশি হাত ও চোখেও জখম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমি থানায় মামলা করা হলে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।

সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ সোহান বলেন, পারিবারিক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার এক ভাইসহ পরিবারের কয়েকজন এ ঘটনায় জড়িত। তবে আমি এ ঘটনায় জড়িত নই। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজেও বিষয়টি দেখবেন।

এদিকে এ ঘটনায় একটি ভিডিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, ঘটনার দিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে ওই শিক্ষককে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে একদল লোক। মোটরসাইকেলের সামনে ছিলেন গাইবান্ধা জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর সরকার। এসময় সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ সোহান পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে কিনা, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহমেদ সোহান বলেন, আমি নিজে ছাত্রদল করি এবং ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। তবে অভিযুক্তরা এটিকে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করলেও বিষয়টি সম্পূর্ণ পারিবারিক। তাই রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কোনো কারণ নেই। 

তবে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুর রহমান সরকার ও তার পরিবার জানায়, এ ঘটনা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এ কারণে দিনদুপুরে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার ভিডিও রয়েছে। তারপরও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চেয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, গাইবান্ধার এই ঘটনায় বিষয়টি শুনেছি। ঘটনা সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

মামলার এজহারে বলা হয়, আসামিরা আমার আত্মীয়-স্বজন। ১নং আসামির কন্যার সঙ্গে আমার ছেলে গত ২০১৩ সালে বিয়ে হয় এবং বর্তমানে দুটি সন্তান আছে। সংসার করাকালীন সময়ে তাদের উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ ও মনোমালিন্য হইলে ৬নং আসামির প্ররোচনায় সুকৌশলে প্রায় ৩ মাস পূর্বে ছেলের বউ তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি ছেলের বউকে মোবাইল ফোনযোগে আসার কথা বললে সে বলে, আমার পিতা, ভাই এবং চাচারা ওখানে ঘর-সংসার করিতে দেবে না। পরবর্তীতে আমি বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতে ছেলের বউকে নিয়ে আসার জন্য যাই এবং ২নং আসামীর দোকানঘরে বেশ কয়েকদিন গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরসহ সালিশী দরবার করা হয়।

‘‘কিন্তু তারা কোন ক্রমেই ঘরসংসার না করার শর্তে আমাকে প্রস্তাব করেন যে, আপনার ছেলের বউয়ের নামে নতুন করে ২০ লাখ টাকা কাবিননামা করতে হবে এবং সাদুল্লাপুর বন্দরে ৫ শতাংশ জমি আপনাকে ক্রয় করে এবং সেখানে ঘর উত্তোলনপূর্বক এছাড়াও মাসিক ভরণপোষণ বাবদ ৫ হাজার টাকা আপনাকে দিতে হবে, এ শর্তে আমরা মেয়েকে দিয়ে ঘর-সংসার করাতে রাজি আছি। এই শর্ত না মানলে আপনি এবং আপনার পরিবারের যে কোন সদস্য উপজেলায় প্রবেশ করলে খুন-জখম করে হাড়-হুড্ডি ভেঙ্গে দেয়া হবে।’’

মামলার এজহারে আরও বলা হয়, এ ঘটনার জের ধরেই আসামিরা গত ৪ মার্চ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে উপস্থিত হলে মোটরসাইকেলে এসে ৪নং আসামি শিবলু আমাকে বলে যে, ‘এ শালা থাম’ একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ৪নং আসামিসহ ৩,৫,৬,৭,৮,৯ নং আসামি আমাকে ঘেরাও করে এবং ৪নং আসামীর গাড়িতে ওঠার জন্য ধস্তাধস্তি করে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরা এতে বাধা প্রদান করলে জোরপূর্বক সকল আসামিরা ৪নং আসামির মোটরসাইকেলে উঠিয়ে ৬নং আসামি আমাকে জোর করে ধরে ২নং আসামির দোকানঘর (মেসার্স সিনহা ট্রেডার্স) উপস্থিত করান এবং উপস্থিত হওয়া মাত্রই ১নং আসামি হুকুম দিয়ে বলে যে, শালাকে শেষ করে দাও। সঙ্গে সঙ্গে ৬নং আসামি তার হাতে থাকা ধারালো ছোড়া দ্বারা আমার মাথার ডান পার্শ্বে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। যার ফলে সেখানে প্রায় ২.৫০ ইঞ্চি প্রশস্ত হয় এবং অনুমান ১ ইঞ্চি গভীর হয়। সেখানে ডাক্তার ৮টি সেলাই দিয়াছেন। অতঃপর ৪নং আসামি শিবলু তার হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দ্বারা চোট মেরে রক্তাক্ত জখম করে। যার ফলে সেখানে ২ ইঞ্চি প্রশস্ত ও অনুমান ১ ইঞ্চি গভীর হয় এবং ডাক্তার সেখানে ৫টি সেলাই দিয়াছেন এবং ৩নং আসামি তার হাতে থাকা লোহার রড দ্বারা আমার ডান চোখে প্রচণ্ড আঘাত করতে গেলে আমি আমার ডান হাত আগাই দিলে হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি ফাটিয়া যায় এবং আঘাতটি পুরোপুরি রক্ষা করিতে না পারায় আমার চোখের বর্তমান রক্ত জমাট বাধিয়াছে ও দৃষ্টির বড় সমস্যা হয়েছে। অতঃপর ৯নং আসামি তার হাতে থাকা লোহার রড দ্বারা আমার ডান হাতে এলোপাতাড়ি মারধর করায় আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে যাই। আমার অবস্থা মুমূর্ষু দেখিয়া বন্দরের অপরিচিত লোকজন অটোভ্যানযোগে আমাকে সাদুল্লাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।