
আর্থিক খাতে দু’টি নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে ‘ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ (বাস্তবায়নকাল : ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫) এবং অপরটি হচ্ছে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (অক্টোবর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৬)।
এই দু’টি আইন এবং ছয়টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সব ক’টি আইনেরই খসড়া প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চলমান। ইতোমধ্যে কোনো কোনোটির খসড়া চূড়ান্ত করে এর ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া আইনটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরনো আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনগুলো তৈরি ও সংশোধনের কাজ শেষ হলে তা আর্থিকখাতের ভিত্তিকে মজবুত ও শৃঙ্খলায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, ‘ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ এর চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য তা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়েছে।
অন্য দিকে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। মতামতের ভিত্তিতে একটি সভা হয়েছে, আরেকটি সভা দ্রুতই করা হবে।
এছাড়া ছয়টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ ও গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন।
ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন (ডিসেম্বর ২০২৪-এপ্রিল ২০২৫): ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইনটি অধিকতর যাচাইপূর্বক অধ্যাদেশ আকারে খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫৮ থেকে ১০০ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫) : আইনের খসড়াটি বিএসইসি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা করপোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫) : এ দু’টি আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৬) : সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ডিসেম্বরে অংশীজনদের সাথে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শেষে তা বোর্ডসভায় উপস্থাপন কর হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫) : আইনটির খসড়া প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫) : ইতোমধ্যে আইনটির সংশোধিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে ও অংশীজনদের নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে আইন সংশোধনপূর্বক চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব) এর কার্যক্রমও চলমান।
জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- মার্চ ২০২৫-জুন ২৫) : গত বছর ৯ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গত বছর ১৬ এপ্রিল পুনরায় কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ বিভাগ-বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্মিলিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন (অক্টোবর ২০২৪-সেপ্টেম্বর ২০২৫): অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছ থেকে খসড়া পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব)-(ডিসেম্বর ২০২৪-ডিসেম্বর ২০২৫) : ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে গত ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। জনতা-বেসিক-রাকাবের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সূত্র জানায়।