Image description
 

বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনটি মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। স্বাধীনতার পর গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ছয়বার, জাতীয় পার্টি চারবার, আওয়ামী লীগ একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের লোকজন মাঠে নেমে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জালসা, খেলাধুলাসহ সব অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তারা নিজেদের প্রার্থিতা পরিচয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বগুড়া-৩ আসন থেকে বিএনপি ছয়বার, জাতীয় পার্টি চারবার, আওয়ামী লীগ একবার ও স্বতন্ত্র একবার নির্বাচিত হয়। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের হাসান আলী তালুকদার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার এবং সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির এবিএম শাহজাহান নির্বাচিত হন। এরপর আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। ১৯৯১ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মাওলা, ১৯৯৬ সালের জুনে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তার ছেলে বিএনপির আবদুল মোমেন তালুকদার খোকা নির্বাচিত হন। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় আসনটি আওয়ামী লীগ জোটের শরিক জাতীয় পার্টি সুযোগ পায়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নুরুল ইসলাম তালুকদার নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম তালুকদারকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী খাঁন মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত চারজন টিকিট চাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান। প্রার্থীরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে চেয়ে আছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কারও নাম শোনা না গেলেও কে কে নির্বাচন করবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।এ আসনে বর্তমানে সম্ভাব্য সংসদ-সদস্য প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার এবং বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান খান মুক্তা। জামায়াতে ইসলামী থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল গণি মন্ডলকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছে। এরপরও এ আসন থেকে গুনাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নূর মোহাম্মদ আবু তাহের প্রার্থিতা চাইতে পারেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল জানান, তিনি ১৯৭৭ সালে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। জাগো যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজেকে রাজনীতিতে সিনিয়র দাবি করে বেলাল জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক। অবশ্যই বগুড়া-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে অপর প্রার্থী আবদুল মহিত তালুকদারের বাবা আবদুল মজিদ তালুকদার চারবার এবং বড় ভাই আবদুল মোমেন তালুকদার খোকা দুবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বিলম্বের কারণে সুপ্রিম কোর্ট তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই ধানের শীষের প্রার্থিতা চাইবেন। জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে তিনি বহুবার নির্যাতিত হয়েছেন। সেই সঙ্গে এ আসনের মাটি ও মানুষের নেতা হয়ে সার্বক্ষণিক তাদের পাশে থেকেছেন। হিরু আশা করেন, দল থেকে তাকে এ আসনে প্রার্থী করা হবে।

শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ স ম আবদুল মালেক জানান, বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে জেলা শূরা সদস্য মাওলানা আবদুল গণি মন্ডলকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও জনমত অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবদুল গণি মন্ডল জানান, তিনি দুবার দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। পরে নির্বাচন বয়কট করায় তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। জেলা জামায়াত নেতা ও গুনাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মাদ আবু তাহেরের স্বজনরা জানান, তিনিও দলের কাছে টিকিট চাইবেন। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি মেনে নেবেন।