
কক্সবাজার বিমানবন্দরসংলগ্ন হ্যাচারি ক্যাম্পাস স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। চার দশকের বেশি সময় ধরে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবহৃত জায়গাটি সম্প্রতি বিমানবাহিনীকে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিংড়ি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের দুটি অফিস থাকা ১২ একর আয়তনের হ্যাচারি ক্যাম্পাসের নতুন ঠিকানা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ পর্যন্ত আলোচনায় থাকা তিনটি বিকল্পের ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক এক সভায় বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে কক্সবাজারের বিমানঘাঁটিতে পর্যাপ্ত ‘টেকনিক্যাল এরিয়া’ না থাকায়
এরপর পৃষ্ঠা ৭ কলাম ২
অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বিমানবাহিনী তাদের টেকনিক্যাল এরিয়া সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে হ্যাচারি ক্যাম্পাসের ১২ একর জমি তাদের প্রয়োজন। বিষয়টি আলোচনার পর সভায় বিমানবাহিনীকে জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
হ্যাচারি ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তিনটি বিকল্প স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো টেকনাফের সাবরাং, কক্সবাজার সদরের কবিতা চত্বর এবং কক্সবাজারের খুরুশকুলে পর্যটন করপোরেশনের জায়গা। এর মধ্যে সাবরাং কক্সবাজার থেকে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে। কবিতা চত্বরকে পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। তৃতীয় বিকল্প খুরুশকুলের জায়গাটিও ছাড়তে নারাজ পর্যটন করপোরেশন। সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল হক হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুরুশকুলের ৭৫ একরের জায়গাটি পর্যটনের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। জায়গাটি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা হবে পর্যটনের স্বর্গরাজ্য। এর মাধ্যমে অনেক বিদেশি বিনিয়োগও আসবে। সেখানে হ্যাচারি ক্যাম্পাস করা হলে দেশের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
হ্যাচারি ক্যাম্পাসে বর্তমানে রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপকের কার্যালয়। হ্যাচারি ক্যাম্পাসের নতুন স্থায়ী ঠিকানা চূড়ান্ত না হওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের ৩০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী আপাতত ভাড়া বাসায় অফিস করবেন। বিমানবাহিনীর মধ্যস্থতায় এরই মধ্যে কক্সবাজার শহরের মোটেল রোডে অফিসের জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ১ মার্চ থেকেই সেখানে অফিস শুরুর কথা রয়েছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্য অধিদপ্তরের হ্যাচারি ক্যাম্পাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘হ্যাচারি ক্যাম্পাসে অনেক সুন্দর ব্যবস্থাপনা ছিল। স্থায়ী ঠিকানায় কবে অফিস স্থানান্তর হবে, তা অনিশ্চিত। এখন ভাড়া বাসার স্বল্প জায়গায় আমাদের অফিস করতে সমস্যা হবে।’
স্থায়ী হ্যাচারি ক্যাম্পাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সদস্য করে ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি। এর মধ্যে খুরুশকুলে পর্যটনের জায়গাটি আমাদের পছন্দ হয়েছে।’
খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে পর্যটন করপোরেশনের জায়গাটির এক পাশে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) শুঁটকি প্রকল্প এবং অন্য পাশে সরকারের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে পর্যটনের জায়গাটি তাদেরকে হস্তান্তরের প্রস্তাব পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জায়গাটি বিমানবাহিনীর জমির সীমানার লাগোয়া। বলা হয়েছে, সম্প্রসারণ করতে হলে জায়গাটা তাদের লাগবে। আপাতত ওরা (বিমানবাহিনী) আমাদের ভাড়া বাসায় অফিসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। স্থায়ীভাবে অফিস স্থানান্তরের জন্য জায়গা এখনো পাইনি। আমাদেরও উপযুক্ত জায়গা লাগবে।’
খুরুশকুলের জায়গা নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের আপত্তি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যটনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তাদের একটু আপত্তি আছে, কিন্তু তাদের বোঝা উচিত, শুঁটকির গন্ধের পাশে পর্যটকেরা স্বস্তি বোধ করবে না। কাজেই সেখানে পর্যটন সফল হবে না; বরং ওখানে আমাদের কর্মকর্তাদের অফিস হলে তাদের কাজ অনেক সহজ হবে।’