Image description

ড. মো: হাছান উদ্দীন

বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ১৫ বছর ছিল একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক স্থবিরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্কোচনের সময়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর দমন-পীড়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও আইনের শাসনের অবক্ষয়ে জনগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান এ অব্যাহত নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক গণচেতনার প্রতিফলন। এই পটভূমিতে মানবাধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সরকারের অপরিহার্যতা আজ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতার হরণ এবং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ—এইসব ঘটনায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হচ্ছে সুশাসন ও মানবাধিকার রক্ষা।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বেআইনি আটক ও রাজনৈতিক হয়রানির অভিযোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২,৬৯৯ টি বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ৬৭৭টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ছিল RAB ও পুলিশের দিকে, যদিও অধিকাংশ ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়নি এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। শুধু বিচারবহির্ভূত হত্যা নয়, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ১,০৪৮টি। এসব মৃত্যু ছিল নির্যাতনের ফল অথবা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা Human Rights Watch (HRW) ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে RAB এর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দেয়।

বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের উপর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা দায়ের করা হয়। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রায় অর্ধেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়। গ্রেপ্তার, রিমান্ডে নির্যাতন, এবং জামিন অযোগ্য মামলার মাধ্যমে বিরোধীদের কার্যত রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ডে দেশের রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়ে পড়ে, যা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অশনিসঙ্কেত। বিরোধী কণ্ঠকে দমন করার এই নীতি কার্যত দেশের রাজনীতি থেকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী মতকে মুছে ফেলার কৌশল হয়ে উঠেছিল।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমন ছিল আরেকটি গুরুতর সমস্যা। ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক, ব্লগার ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ২০২৩ সালেই এই আইনে অন্তত ৩৩৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। যেসব সাংবাদিক সরকারি দুর্নীতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরেছেন, তাদের কারাবন্দি হতে হয়েছে কিংবা বিদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ২০২৫ সালের একটি গবেষণা (Ahmed, 2025) অনুযায়ী, সরকার algorithm ও ডিজিটাল সেন্সরশিপ ব্যবহার করে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে সংবাদমাধ্যমে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। World Press Freedom Index 2024 অনুসারে, বাংলাদেশ ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৬তম অবস্থানে রয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচু অবস্থান।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুরুতর প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে, যার একাধিক বাস্তব উদাহরণ রয়েছে—যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্যকে দুর্বল করেছে এবং মানবাধিকার বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলসহ কয়েকটি রায়কে “বাকশাল পুনর্বাসন” হিসেবে উল্লেখ করে ব্যাপক রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম হয়। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কথোপকথন ফাঁস হওয়ার ঘটনা, যা পরে “স্কাইপ কেলেঙ্কারি” নামে পরিচিত হয়, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার প্রতি বড় আঘাত হানে। ফাঁস হওয়া অডিও-ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় লেখায় তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নিচ্ছেন এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপের মুখে কাজ করছেন। The Economist, Amnesty International ও Human Rights Watch এই ঘটনাকে বিচার বিভাগে ভয়াবহ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করে।

একইভাবে, ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশে যাওয়া ও পরবর্তী পদত্যাগ, এবং তাঁর স্মৃতিকথা A Broken Dream-এ রাষ্ট্রীয় চাপের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাবের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০২১ সালে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগে আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে Supreme Court Bar Association (SCBA), যা বিচার বিভাগের স্বশাসনের পরিপন্থী ছিল। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মোট ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেন, যাদের মধ্যে দুজন প্রকাশ্যে রাজনৈতিক চাপের কথা স্বীকার করেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা CIVICUS Monitor (2025) যথার্থই মন্তব্য করে: “The judicial system, in practice, functions more as an arm of the executive than as a guardian of constitutional rights.” এসব ঘটনার পুঞ্জিভূত ফল হলো: জনআস্থার ক্ষয়, ন্যায়বিচারের সংকট, এবং মানবাধিকারের পথরোধ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না, আর সেটিই আজকের বাংলাদেশের অন্যতম মৌলিক সংকট।

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি মোড় পরিবর্তনের সূচনা করেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষ মিলে একটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লব ঘটায়। এই অভ্যুত্থানের চাপে তৎকালীন সরকার পদত্যাগ করে এবং নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এ বিষয়ে গবেষক Reza ও Bhuiyan (2025) লিখেছেন: “This revolution was a generational voice—asserting that liberty, dignity, and democracy must be non-negotiable.”

এই নতুন সরকার মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন—মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের উদ্যোগ, বিচার বিভাগ, এবং নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য স্বতন্ত্র টাস্কফোর্স। তবে Hasan (2024) ও Alam & Roy (2025) তাঁদের গবেষণায় বলেন, এই উদ্যোগগুলো এখনো রাজনৈতিক আস্থা, স্বচ্ছতা এবং সময়োপযোগী বাস্তবায়নের অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। মানবাধিকার রক্ষায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রধান নিয়ামক হলো একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কারণ, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ছাড়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বৈধতা পায় না, এবং সেই শাসনের অধীনে নাগরিক অধিকারও সুরক্ষিত থাকে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, যার আওতায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং রাজনৈতিক সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে বিরোধী পক্ষ এবং নাগরিক সমাজের বড় একটি অংশ এই সময়সূচিকে বিলম্বিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা করছে।

গণতন্ত্রে নির্বাচন কেবল ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নয়, এটি রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা ও নাগরিক অধিকারের প্রধান নিয়ন্ত্রণযন্ত্র। এটি এমন একটি শাসনপ্রক্রিয়া যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং রাষ্ট্রের সব অঙ্গ ও সংস্থা জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া মানবাধিকারের বাস্তবায়ন অসম্ভব। জবাবদিহিতা না থাকলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দমন দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে গুম-খুনের বিচার হয় না। বিরোধী কণ্ঠ দমন করলে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ গড়ে উঠে, যা মৌলিক অধিকার ধ্বংস করে। বাংলাদেশে যদি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে মানবাধিকার শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে। অতএব, একটি গ্রহণযোগ্য ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে — যা সমাজে হতাশা, সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা ডেকে আনবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত মানবাধিকার সংস্কার কর্মসূচিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, তা এখনো আংশিক বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়ে গেছে।

প্রথমত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি “জাতীয় মানবাধিকার তদন্ত কমিশন” গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩৬টি ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্ত এখনো ঝুলে আছে এবং এখনও কোনো উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি—যা জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় এক বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না হলেও, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এ আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। যেমন: 'মনগড়া তথ্য প্রচার'-এর দায়ে গ্রেপ্তারে আদালতের পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে আইনটির মূল কাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় বাকস্বাধীনতার উপর নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েই গেছে।

তৃতীয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে একটি 'জুডিশিয়াল রিফর্ম টাস্কফোর্স' কাজ শুরু করেছে, এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বিচারকদের নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য পৃথক নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাস্তবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

চতুর্থত, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। একজন বিচারপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন কমিশনের কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ভোটার তালিকা, পর্যবেক্ষক নীতিমালা ও EVM ব্যবহার সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

পঞ্চমত, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানবাধিকার শিক্ষা চালুর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি খসড়া কারিকুলাম তৈরি করেছে, এবং ২০২৬ সাল থেকে তা পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, মানবাধিকার রক্ষার জন্য ঘোষিত বহু পদক্ষেপ নীতি পর্যায়ে বিদ্যমান থাকলেও, বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতায় ঘাটতি সুস্পষ্ট। ফলে, ভবিষ্যৎ সরকারকে শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, ব্যবস্থাগত ও কাঠামোগত সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একে অপরের পরিপূরক। যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে মানবাধিকার কেবল নীতিমালার স্তরে সীমাবদ্ধ থাকবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে —‘ভয়ের সংস্কৃতি’ যত গভীরই হোক, জনগণের ইচ্ছাশক্তির কাছে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এই নবজাগরণের নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণ সমাজ, সুশীল অংশ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে একটি দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।

 

লেখক: অধ্যাপক, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী।