
সাংবাদিকদের সবজান্তা ভাবে মানুষ। সম্ভবত সে কারণেই দেখা-সাক্ষাৎ, আড্ডা-আলোচনায় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় হররোজ। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্ন একটাই—ফেব্রুয়ারিতে কি নির্বাচন হবে? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ-বিদেশে বারবার বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন দিয়ে তার সরকার বিদায় নেবে। অন্য উপদেষ্টারাও তেমনটাই জানাচ্ছেন জোর গলায়। তবু মানুষের মনে সংশয়। ঘোষিত সময়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হওয়া নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ের মূলে রয়েছে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈধ। জুলাই সনদ ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান করছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত। পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে এখনো অনঢ় অবস্থানে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও পিআর ইস্যু সহসা সুরাহা না হলে নির্বাচনি তফসিল যথাসময়ে (ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে) ঘোষণা হবে কি না—সে সংশয়ের অবকাশ থাকবেই।
আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব যত বাড়ছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ব ইস্যুতে ঐকমত্যের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। পাশাপাশি নির্বাচনি সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে দুদলের মধ্যে বোঝাপড়ায় ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে কি না—তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। কবে ফিরবেন, তার দিন-তারিখ অবশ্য এখনো অজানা।
আন্দোলন ও নির্বাচনি প্রস্তুতির পাশাপাশি জামায়াতের এখন বিবর্তনকাল চলছে। দাবি—প্র্যাগম্যাটিক হচ্ছে। মানে হলো, তত্ত্ব বা তাত্ত্বিক নিয়মের চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করতে চাচ্ছে দেশের ইসলামপন্থি বৃহৎ দলটি। তারা মধ্যপন্থা নিতে যাচ্ছে কি না—সে আলোচনা চলছে। কোনো কোনো বক্তব্য ও তৎপরতা জামায়াতকে ‘মডারেট ইসলামি’ দল থেকে ‘মডারেট সেক্যুলার’ দলের পথে নিয়ে যাচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। সদ্য সমাপ্ত দুর্গাপূজায় জামায়াতকে নতুন রূপে দেখা গেছে। সারা দেশে মণ্ডপে মণ্ডপে জামায়াত নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মণ্ডপ পরিদর্শনকালে অতি-উৎসাহী হয়ে অনেক জামায়াত নেতা মাত্রা অতিক্রম করেছেন। মণ্ডপে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়’ নিয়ে কথা হচ্ছে। গুঞ্জন আছে, ভারত জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জামায়াতও অনাগ্রহ দেখায়নি। যদিও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়া ৪০ কূটনীতিকের তালিকায় ভারতীয় হাইকমিশনার নেই। সহসা যুক্ত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জামায়াত নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মুনিরের একটি বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে। তিনি রোজা ও পূজাকে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘রোজা ও পূজা মিলে বাংলাদেশ’। মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়কে একই বৃন্তের দুটি কুসুম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার এ বক্তব্যে নেটিজেনদের একটি অংশ তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে কওমি অঙ্গনসহ ইসলামপন্থি অন্যান্য দলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্টরা শিশির মুনিরের ভিডিও বক্তব্যটি শেয়ার করে জামায়াতের আদর্শিক বিচ্যুতি হিসেবে দেখাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরাও একই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় সঙ্গী হয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে দেবী দুর্গার প্রতি হাতজোড় করে সম্মান জানালে তা ব্যাপকভাবে শেয়ার করে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেক জামায়াত নেতাকর্মী। বিএনপি কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, শিশির মুনির যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যদি বিএনপির কোনো নেতার মুখে উচ্চারিত হতো, তাহলে জামায়াতের ভার্চুয়াল অ্যাকটিভিস্টরা কী করতেন? নিশ্চিতভাবে ওই নেতার পিণ্ডি চটকাতেন। হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীও সমালোচনার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শুক্রবার হাটহাজারীতে এক মাহফিলে তিনি বলেছেন, ‘যারা পূজা আর রোজা একই বলে, এগুলো কি ইসলাম?’ তিনি আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট না দেওয়ারও আহ্বান জানান। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলামের আমির।
সমালোচনার মুখে অ্যাডভোকেট শিশির মুনির পরে আরেকটি ভিডিও বক্তব্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে আগের বক্তব্য থেকে তিনি খুব একটা সরেননি। দুঃখও প্রকাশ করেননি। বরং আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। বিদ্রোহী কবি নজরুলের কাব্যাংশ থেকে ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ -এর কথা উদ্ধৃত করেছেন বলে জানান। যদিও প্রতিক্রিয়াটি তীব্র হয়েছে রোজা ও পূজাকে একাকার করার কারণে। রোজা মুসলমানদের পাঁচটি মৌলিক ইবাদতের একটি। পূজা মুশরিকদের বৃহত্তম উৎসব। মূর্তির পূজা। মুশরিকদের উৎসবে অংশ নেওয়া ও একাত্ম হওয়ার ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে ঈমানদারদের সতর্ক করা হয়েছে স্পষ্ট করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে ‘রোজা’ ও ‘পূজা’কে একাকার করার মোটেই প্রয়োজন ছিল না।
শিশির মুনির ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি। হালে তরুণ ও মেধাবী উদীয়মান নেতা হিসেবে জামায়াত এবং শিবিরের নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয় ও সমাদৃত। সুনামগঞ্জে তার নির্বাচনি এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের আসন। ভোট টানার জন্য তিনি বক্তব্যের মধ্যে বাড়াবাড়ি করেছেন বলেই মনে করছেন জামায়াতের রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকরা। এমনকি দলের অনেক সাধারণ নেতাকর্মীও বক্তব্যটি মানতে পারছেন না। এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনি এলাকাও কুমিল্লার হিন্দু অধ্যুষিত জনপদ। তিনিও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। হাসনাত আবদুল্লার বক্তব্যটি শেয়ার করে অনেকে বলছেন, শিশির মুনিরের তুলনায় হাসনাত আবদুল্লাহ অনেক বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। মুসলিম ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে তিনি বিসর্জন দেননি।
প্র্যাগম্যাটিক হওয়ার অর্জন ও বিসর্জনের বিষয়ে জামায়াত নিশ্চয়ই সচেতন রয়েছে। বোধ করি, বুঝেশুনেই এগোচ্ছে। বাস্তববাদী ব্যক্তি বা দল বিদ্যমান অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উপায়ে কাজ করবে, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু একটি আদর্শিক সংগঠন ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সমাজ ও রাষ্ট্রের গড্ডালিকায় কতটা গা ভাসাতে পারে? দলীয় মূলনীতির প্রশ্নে কতটা আপস করতে বা উদার হতে পারে? এসব প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতকে এসব প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই নিবন্ধ লিখতে বসে চোখে পড়ল চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এক জামায়াত নেতা তার ফেসবুকে তারেক রহমান ও বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বিকৃত ছবি শেয়ার করাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। নির্বাচনকালে এ ধরনের সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে। ১৩ মাস আগের সহযাত্রী দুটি দল ক্রমেই সাংঘর্ষিক অবস্থানে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মকে দু-দলের অ্যাকটিভিস্টরা কুরুক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো চাঁদাবাজি, দখলদারি বা অপরাধের ঘটনা পেলে মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন জামায়াত-শিবিরের নেটিজেনরা। অনেক ক্ষেত্রে তিলকে তাল করতেও দেখা যায়। আবার অপেক্ষাকৃত কম হলেও জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর তেমন ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেলে পাল্টা হামলে পড়ছেন বিএনপি সমর্থকরা। অনেক ক্ষেত্রে সভ্যতা-ভব্যতারও বালাই থাকছে না। ফেইক কনটেন্ট দিয়েও জামায়াতকে ঘায়েল করতে চাইছেন তারা। আবার দুপক্ষের বিরুদ্ধেই ভার্চুয়াল যুদ্ধে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্টরা। ফলে বর্তমানে দেশে সক্রিয় প্রধান দুটি দলই সাধারণ মানুষের কাছে কমবেশি ভিলেনে পরিণত হচ্ছে। ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে।
জামায়াতের বিবর্তনের আরেকটি দিক হচ্ছে—প্রথমবারের মতো দলের শপথধারী জনশক্তির বাইরের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী করার চিন্তা। এমনকি অমুসলিম প্রার্থীকেও বিবেচনায় নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানা যাচ্ছে প্রকাশিত সংবাদে। আবার দলীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে তিনটি সংসদীয় আসনে দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। আসনগুলো হচ্ছে—পাবনা-৫, ময়মনসিংহ-৬ ও চট্টগ্রাম-১৫। এছাড়া দলীয় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনাও শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে ভাঁজ ফেলার কথা। গত পক্ষকালে নওগাঁ ও ঢাকার নবাবগঞ্জে দুটি যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত ঘটনায় জামায়াত নেতাকর্মীর নাম আসায় দলের ভেতরে-বাইরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যে মানদণ্ডে জামায়াত জনশক্তি অন্তর্ভুক্ত ও নেতৃত্ব নির্ধারণ করে আসছিল, তা শিথিল করেছে। নির্বাচন সামনে রেখে গতানুগতিক ধারার দলের নেতাকর্মীদের জন্য জামায়াতের দরজা উন্মুক্ত করায় সামনের দিনগুলোয় দলীয় পরিচয়ে সামাজিক অপরাধসহ নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকবে।
বিএনপি ও জামায়াতের ক্ষমতার লড়াই এবং সম্ভাব্য সংঘাত নির্বাচন কমিশনকেও ভাবাচ্ছে। সরকারও দুশ্চিন্তামুক্ত নয়। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপকে বিতর্কিত করতে দুপক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে ভোট কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের কাছে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য জনবল চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে বিএনপির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্টরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের ১০ লক্ষাধিক কর্মকর্তাকে নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং বা পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফল ডাকসুর মতো হবে। যদিও সব জাতীয় নির্বাচনেই ভোট কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকাররা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অতীতেও ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কাজ করেছেন। তখন বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে নির্বাচন করায় সে প্রশ্ন ওঠেনি। এবার প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়ার কারণে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে আপত্তি প্রবল হয়ে উঠছে।
বিএনপি ও জামায়াত একে অন্যের দল থেকে লোক ভাগানোর মিশনে নেমেছে। কোথাও জামায়াত থেকে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। আবার পাল্টা হিসেবে বিএনপি থেকে জামায়াতে যোগদানের ঘটনাও ঘটছে। কয়েক দিন আগে ভোলার চরফ্যাশনে বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলমের হাতে ফুল দিয়ে ৪৫ জামায়াত নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগ দেওয়ার খবর ফলাওভাবে প্রচার করেন বিএনপির সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্টরা। মিরসরাইসহ আরো কয়েকটি স্থানে জামায়াত নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগ দেওয়ার খবর এসেছে। কয়েকটি খবরের প্রতিবাদও করেছে জামায়াত। পক্ষান্তরে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বারী মণ্ডল তার দুই শতাধিক সমর্থক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়ার খবর ব্যাপকভাবে শেয়ার করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। আবদুল বারী ১৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই যোগদানগুলো হচ্ছে সামনের নির্বাচনি স্থানীয় ফল ও ক্ষমতার হিসাবনিকাশ মাথায় রেখে।
রশি টানাটানি বাংলাদেশে জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে নারীদের এ খেলায় আগ্রহ বেশি। পিকনিক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনন্দ আয়োজনে এ ধরনের খেলা এখনো চোখে পড়ে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে টেনে নিজেদের দিকে নিতে পারলেই বিজয় ও পুরস্কার নিশ্চিত হয়। পিআর ও জুলাই সনদ ইস্যুতে নির্বাচনি রশি ধরে বিএনপি এবং জামায়াত টানাটানি করছে। আসলে রশিটা ক্ষমতার। এই টানাটানির ফল দেখতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আখেরে কে কতটুকু লাভবান হবে, তা নিশ্চয়ই মূল্যায়ন হবে।
টানাটানিবিষয়ক রোকনুজ্জমান খানের একটা কবিতা ধার করে আজকের লেখা শেষ করি—
একটা দড়ির দুদিক থেকে টানছে দু-দল ছেলে,
তাই না দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে, জবর মজার খেলা,
এমন খেলা খেলে মোরা কাটিয়ে দেব বেলা।
কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়; ঘাবড়ে গেল মাথা,
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা
নেইকো দড়ি? বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা,
লেজে লেজে ধরবো টেনে হবে দড়ির বাবা।
যেই না বলা দু-দল বানর দুদিক থেকে বসে,
একের লেজটি ধরলো টেনে জোরসে চেপে-কষে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক