
বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বাড়ছে সবজি, পেঁয়াজ ও ডিমের দামও।এতে অস্বস্তি ও দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৪.১ শতাংশ।
নভেম্বরে ছিল ১৩.৮ শতাংশ। এর পর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। ক্রমে হ্রাস পেয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। গত জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল সর্বনিম্ন ৭.৩৯ শতাংশ।
এরপর বাজারে পণ্য সরবরাহ হ্রাস ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৫৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও কষ্ট বেড়েছে দেশের সাধারণ মানুষের।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে চালের মূল্যবৃদ্ধি।
মোট খাদ্য বাজেটের প্রায় ৫১ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কেনার জন্য। এরপর খরচের হিসাবে যুক্ত হয় মাছ, শাকসবজি, ডিম, দুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মূল্য। বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এবং মোটা চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বোরো মৌসুমে ভালো ফলন ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে চালের এই মূল্যবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। এ সময় সরকারি গুদামে চালের মজুদও রয়েছে ভালো। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ব বাজারে চালের দাম কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের মূল্যের প্রধান কারণ মজুদদারি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফা অর্জনের কারসাজি। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ মজুদ বাড়ানোর জন্য চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে সরকারের চাল সংগ্রহ করাও বাজারে চালের সরবরাহ হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বর্তমান সাশ্রয়ী মূল্যে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ করে অপেক্ষাকৃত কম দামে তা খোলা বাজারে বিক্রি এবং দারিদ্র্য সহায়ক কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে চালের মূল্য বৃদ্ধি অবদমিত করা সম্ভব।
শাকসবজি, পেঁয়াজ ও মাছের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে মৌসুমি প্রভাব। গ্রীষ্মকালীন সবজির উৎপাদন স্বাভাবিকভাবে কম। বর্ষাকালে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অতি সমপ্রতি অতিবৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সবজি পচে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এতে প্রকারভেদে সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দামও। শাকসবজি, ডিম ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পচনশীলতা হ্রাস, সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়ন এবং এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে এসব নিত্যপণ্যের দাম কমানো সম্ভব।
বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। তার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অপচয় বাদ দিলে ভোগের জন্য থাকে ২৭ থেকে ২৮ লাখ টন। এমন পরিস্থিতিতে মজুদদারি এড়িয়ে বাজার মূল্যে স্থিতিশীলতা আনার জন্য কমপক্ষে ছয় থেকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা প্রয়োজন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিভিন্ন বৈদেশিক উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়ানো দরকার।
ড. জাহাঙ্গীর আলম,
লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ